পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

হঠাৎ আবির্ভূত হল শশেংকা, অন্ধকারের বুকে একটা দীপ্ত মশালের মতো। আনন্দ-উজ্জ্বল তার মূর্তি।

 ইয়েগরের মৃত্যুর কথা সে জানেনা। এইদিন তার এই আনন্দকে অন্যায় মনে ক’রে সবাই বেশ একটু বিরক্ত হয়ে বললো, আমরা ইয়েগরের কথা বলছিলাম।···

 শশেংকা বললো, ইয়েগর?··· চমৎকার লোক। নয়? বিনয়ী··· নিঃসন্দিগ্ধ··· দুঃখজয়ী ··চির-কৌতুকোচ্ছল···রসিক··· সুকর্মী···বিপ্লবচিত্র অঙ্কনে সিদ্ধহস্ত, বিদ্রোহ-দর্শন রচনায় সুদক্ষ। কী সোজা সরল ভাষায় মিথ্যা এবং অত্যাচারকে সে জীবন্ত করে ফুটিয়ে তোলে···ভীষণের সঙ্গে কৌতুক মিশিয়ে কী অপূর্ব কৌশলে বাস্তবকে করে তোলে আরো ভীষণ, আরো হৃদয়গ্রাহী। আমি তার কাছে ঋণী···তার হাসিমুখ, তার কৌতুক, বিশেষ ক’রে সন্দেহক্ষণে তার সেই আশ্বাসবাণী···তা’ আমি কখনো ভুলবোনা···আমি তাকে ভালবাসি।

 শোফি বললো, সেই ইয়েগর আজ মৃত।

 মৃত!···শশেংকা চমকে উঠলো। তারপর বললো, ইয়েগর মৃত··· একথা আমার পক্ষে বিশ্বাস করা শক্ত।

 আইভানোভিচ মৃদুহাস্যে বললো, কিন্তু এ সত্য কথা, সে মরেছে।

 শশেংকা ঘরের এদিক-ওদিক পাইচারি করে হঠাৎ সোজা দাঁড়িয়ে আশ্চর্য এক সুরে বলে উঠলো, মরেছে অর্থ কি? কি মরেছে? ইয়েগরের ওপর আমার ভক্তি? তার প্রতি আমার প্রেম? আমার বন্ধুত্ব? তার প্রতিভা? তার বীরত্ব? তার কর্ম? মরেছে এই সব? মরেনি, মরতে পারে না। তার যত কিছু ভালো, আমি জানি, তা আমার কাছে কখনো মরবেনা! একটা মানুষকে ‘মরেছে’ বলে বিদায় করে দিতে

১৫৭