পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

দিকে তিনি চাইলেন···মনে হ’ল, এ যেন সে ছেলে নয়, এ নতুন···অপরিচিত। ছেলের জন্য দরদে তাঁর বুক ভরে উঠলাে, কেন এমন কাজ করিস, বাবা?

 মার দিকে চেয়ে শান্ত, গম্ভীর কণ্ঠে পেভেল বললো, আমি সত্য জানতে চাই, মা।

 ছেলের শান্ত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠস্বরে রহস্য-সংকুল ভীষণ কি একটা সংকল্পের সাড়া পেয়ে মা কি বলবেন ভেবে পেলেন না। তাঁর চোখে নীরব অশ্রু দেখা দিলাে।

 কেঁদোনা মা।—পেভেলের মৃদু দরদ-ভরা কণ্ঠ মার কানে এসে ঠেকলাে বিদায়-বাণীর মতো। পেভেল বলতে লাগলাে, মা, ভেবে দেখ দেখি, এ কি জীবন কাটাচ্ছি তুমি! তােমার বয়স চল্লিশ বছর···কিন্তু বাঁচার মতাে বাঁচা কি একটা দিনও বেঁচেছ তুমি? বাবা তােমাকে মারতেন। আমি আজ বুঝি, তাঁর জীবন-ভরা দুঃখের ঝাল ঝাড়তেন তােমার গায়ে···দুঃখ তাঁকে পিষ্ট ক’রে ফেলতো, কিন্তু সে দুঃখের মূল কি, তা তিনি জানতেন না। তিরিশ বছর খেটে গেছেন। কারখানায় যখন সবেমাত্র দু’টি দালান, তখন থেকে তিনি খাটতে শুরু করেন···এখন সেখানে সাত-সাতটা দালান। কল সমৃদ্ধ হয়, কিন্তু মানুষ মরে···কলের জন্য খাটতে খাটতে মরে।···

 আতঙ্ক এবং আগ্রহে উন্মুখ হ’য়ে মা শুন্‌তে লাগলেন। ছেলের চোখ জ্বলছে এক অপরূপ সুন্দর দীপ্তিতে। টেবিলের ওপর ঝুঁকে প’ড়ে, মার আরাে কাছে মুখ নিয়ে তাঁর সজল চোখের দিকে চেয়ে বললাে, আনন্দ তুমি কি পেয়েছো জীবনে? তােমার অতীত জীবন···মনে রাখার মতাে কতটুকু ছিল তাতে?

২০