পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

 মা করুণভাবে ঘাড় নাড়তে লাগলেন···দুঃখ এবং আনন্দ-মেশানো এক অজ্ঞাত নতুন ভাব তাঁর ব্যথিত উদ্বিগ্ন অন্তরের ওপর ছড়িয়ে পড়লো শান্তি-প্রলেপের মতো। নিজের সম্বন্ধে, নিজ জীবন সম্পর্কে এমন কথা এই প্রথম কানে এলো তাঁর। যৌবনে তাঁর মনেও একদিন আকাঙ্ক্ষা, অতৃপ্তি, বিদ্রোহ ধূমায়িত হ’য়ে উঠেছিল···কিন্তু তা’ বহুদিন হল নিঃশেষে চাপা পড়ে গেছে। আজ যেন সেই আগুন নতুন ক’রে উস্‌কে উঠ্‌ছে। চিরদিন তারা শুধু দুঃখের অভিযোগই ক’রে এসেছে···কিন্তু এ দুঃখের কারণ কি, প্রতিকারই বা কি···তা’ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় নি। আজ সে সমস্যার সমাধান করবার মহৎ সংকল্প নিয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর ছেলে···গৌরবে, আনন্দে তাঁর বুক ভ’রে উঠলো!···ছেলের বক্তৃতার মাঝখানে ব’লে উঠলেন, তা, কি করতে চাও তুমি?

 পাঠ করতে হবে এবং প’ড়ে অন্যকে শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের মজুরদের পাঠ করা অত্যন্ত দরকার···আমাদের শিক্ষা করতে হবে, বুঝতে হবে, জীবন কেন আমাদের পক্ষে এত দুর্বহ।

 মার বলতে ইচ্ছা হ’ল, বাছা, তুমি কি করবে? ওরা যে তোমায় পিষে ফেলবে! তোমার প্রাণ যাবে! কিন্তু ছেলের আনন্দের উচ্ছ্বাসে বাধা দিতে সাহস হ’ল না। ছেলে অগ্নিগর্ভ ভাষায় মনের জ্বালা ব্যক্ত ক’রে যায়, মা সচকিত হ’য়ে নিম্নস্বরে সুধোন, তাই নাকি, পাশা?

 হাঁ, মা—ছেলে দৃঢ়স্বরে জবাব দেয়। তারপর মাকে সে বলে সেই সব লোকের কথা, যাঁরা চান শুধু মানুষের মঙ্গল, যাঁরা চান শুধু মানুষের অন্তরে সত্যের বীজ বপন করতে···এবং এই অপরাধে তাঁরা পশুর মতো হত হন...জেলে যান, নির্বাসন-দণ্ড ভোগ করেন, সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত

২১