পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

পাচ্ছ, কী শোচনীয় জীবন তোমাদের। অনেকে কিন্তু এই কথাটাই বুঝতে পারেনা। হাজার হাজার লোক গরু-বাছুরের মতো বেঁচে থেকে বড়াই করে, তোফা আছি। কিন্তু কোথায় তোফা তাদের জীবন! আজ কাজ শেষ হলে খাওয়া, কালও কাজ শেষ হ’লে খাওয়া, পরশুও তাই—দিনের পর দিন, বছরের পর বছর···ঐ একই রুটিন···কাজ আর খাওয়া, কাজ আর খাওয়া। সঙ্গে সঙ্গে কাচ্চা-বাচ্চার দল আমদানি, দু’দিন তাদের নিয়ে আমোদ···তারপরে রুটিতে টান পড়লে তাদেরই ওপর রাগের ঝাল ঝাড়া, ‘খালি গোগ্রাসে গেলা, বড়োও হয় না যে, কাজ ক’রে একটু সাহায্য করবে।’ ছেলেমেয়েদের তারা ভারবাহী করে তোলে। ছেলেমেয়েরা পেটের জন্য খাটে, জীবনটাকে টেনে নিয়ে চলে একটা চুরি-করা পচা ঝাড়নের মতো। প্রাণ তাদের চঞ্চল হয়ে ওঠেনা আনন্দের সাড়ায়, কখনো দ্রুত তালে বেজে ওঠেনা হৃদয়দ্রাবী ভাবের আবেগে। কেউ বাঁচে ফকিরের মতো ভিক্ষার ঝুলি সম্বল ক’রে, কেউ জীবন কাটায় চোরের মতো পরের জিনিস নিয়ে। কর্তারা চোরের আইন তৈরি করেছে, লাঠিধারী রক্ষীদল মোতায়েন করে তাদের বলছে, ‘আমাদের তৈরি আইন রক্ষা কর! ভারি সুবিধার আইন এগুলো—জনসাধারণের রক্ত শুষে নেওয়ার অধিকার আমাদের দিয়েছে।’ বাইরে থেকে মানুষকে চেপে পিষে নিঙরে নিতে চায় ওরা, কিন্তু মানুষ বাধা দেয়। তাই ভেতরে এই আইন চালানো— যুক্তি-শক্তিও যাতে তাদের লোপ পেয়ে যায়। মানুষ একমাত্র তারাই যারা মানুষের দেহের শৃঙ্খল নষ্ট করে, মানুষের মনের শৃঙ্খল অপসারিত করে। তুমিওতো তাই করতে চলেছো, মা—তোমার সাধ্যমত।

৭৩