পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

 মা বললেন, কর্তাদের কথা বলছিল সে। সত্যিই কি তাই? কর্তারা কি তোমাদের প্রবঞ্চিত করছেন না?

 এণ্ড্রি বললো, তাই নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছ বুঝি, মা?···তা’ যা’ বলেছে, টাকা নিয়েই যত গোলমাল। ওঃ, টাকা যদি থাক্‌তো, মা!···আমরা এখন আছি ভিখের ওপর···এইতো ধরো নিকোলাই, পঁচাত্তর রুবেল মাইনে পায়, তার পঞ্চাশ রুবেলই আমাদের দেয়। অন্যান্য সবাইও তাই। ছাত্ররা খেতে পায় না, তবুও একটি একটি ক’রে কোপেক জমিয়ে আমাদের পাঠায়। কর্তাদের কথা বলছিলে, হাঁ, তাদের মধ্যেও রকমফের আছে বৈকি! কেউ আমাদের ঠকাবে, ছেড়ে যাবে, আবার কেউ আমাদের সঙ্গে থাকবে, সেই উৎসব-দিবসে আমাদের সহযাত্রী হবে। সে উৎসব-দিবস···জানি তা দুরে, বহু দুরে। কিন্তু পয়লা মে আমরা একবার তার অনুষ্ঠান ক’রে আনন্দ করব।

 তার কথায়, তার আনন্দে মার মন থেকে দুশ্চিন্তা দূর হয়। এণ্ড্রি ঘরময় পায়চারি করে বেড়াতে লাগলো, তারপর আবার বললো, জানো, মা, প্রাণের মধ্যে মাঝে মাঝে এমন এক আশ্চর্য ভাব জাগে! যেখানে যাও, মনে হবে, সকল মানুষ তোমার কমরেড—সবার মাঝে একই আগুন দীপ্ত, সবাই আনন্দময়, সবাই ভালো। কথা নেই, অথচ সবাই সবাইকে বোঝে। কেউ কাউকে বাধা দিতে চায় না, অপমান করতে চায় না, তার আবশ্যকও বোধ করে না। সবাই একতাবদ্ধ, প্রত্যেকটি প্রাণ গায় তার নিজের গান। সমস্ত গানের তরঙ্গ সম্মিলিত হ’য়ে প্রবাহিত হয় এক বিশাল, বিরাট, মুক্ত-স্রোতা আনন্দের নদী। যখন তুমি এই কথা ভাববে, মা, যখন ভাববে, এ হ’বে, এ না হ’য়ে পারে না, তখন বিস্ময়বিমুগ্ধ প্রাণ আনন্দে গলে যাবে। এতো আনন্দ যে, তা’ তুমি

৭৮