পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

সামলাতে পারবে না, চোখ সজল হ’য়ে উঠবে।···কিন্তু এ স্বপ্ন হ’তে যখন জেগে উঠবে, যখন সংসারের দিকে চাইবে, দেখবে সব-কিছু তোমার চারপাশে ঠাণ্ডা, নোঙরা,—সবাই শ্রান্ত, ক্ষুধার্ত, কর্মব্যস্ত সংসারের চল্‌তি পথে মানবজীবন কাদার মতো মথিত হচ্ছে, পদদলিত হচ্ছে।···হাঁ···ব্যথা পাবে সন্দেহ নেই, কিন্তু তবু তোমায় মানুষকে অবিশ্বাস করতে হবে, ভয় করতে হবে, ঘৃণা করতে হবে। মানুষ বিভক্ত, জীবন মানুষকে দু’টুক্‌রো করে রেখেছে। তুমি তাকে ভালোবাসতে চাইবে, কিন্তু কি ক’রে বাসরে? কি ক’রে ক্ষমা করবে সে মানুষকে, যে তোমায় আক্রমণ করছে বন্য পশুর মতো। বুঝছেনা যে তোমার মধ্যেও একটা আত্মা আছে, তোমার মুখে—মানুষের মুখে আঘাত দিচ্ছে। তুমি ক্ষমা করতে পারোনা—তোমার নিজের কথা ভেবে নয়, মানবজাতির কথা ভেবে। নিছক ব্যক্তিগত অপমান আমি ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু অত্যাচারীকে অপমান করার আস্কারা দিতে পারি না, মানুষকে মারার, হাত পাকাবার জন্য আমার পিঠ পেতে দিতে পারি না।···

 মা চুপ করে শুনতে থাকেন। এণ্ড্রির চোখ জ্বলছে। দৃঢ়কণ্ঠে সে বলতে লাগলো, নোঙরা যা’ তা’ আমাকে আঘাত না দিলেও তাকে আমি ক্ষমা করবোনা। আমি একা নই দুনিয়ায়। আজ যদি আমি আমাকে অপমানিত হতে দিই—হয়তো আমি তাকে হেসে উড়িয়ে দিতে পারি, গায়ে না মাখতে পারি, কিন্তু অপমানকারী যে, সে আজ আমার ওপর শক্তি পরীক্ষা ক’রে বর্ধিত-স্পর্ধায় কাল আর একজনের পিঠের চামড়া তুলবে। এই জন্যই আমরা বাধ্য হই, মানুষে মানুষে তফাৎ করতে— যারা অত্যাচারী তাদের দূরে রাখতে, যারা সত্যের জন্য লড়াই করছে তাদের আপনার বলে টেনে নিতে।···বিপদই হচ্ছে এইখানে। দু’রকম চোখ

৭৯