পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

ওরা দেখি ছেলেদের জেলে পাঠিয়ে দিব্যি আছে, খায়-দায়, হাসি-গল্প করে, যেন কিছুই হয়নি।

 এণ্ড্রি বল্‌লো, এইটেই তো স্বাভাবিক। আইন আমাদের ওপর যতটা কড়া, ওদের ওপর ততটা নয়। আর আমাদের চাইতে আইনের দরকারও ওদের বেশি। এইজন্যেই আইন যখন ওদের নিজেদের মাথায় ঘা দেয়, ওরা কাঁদলেও জোরে কাঁদেনা—নিজের লাঠি নিজের মাথায় পড়লে তত লাগেনা! ওদের কাছে আইন রক্ষা-কর্তা, আর আমাদের কাছে আইন শৃঙ্খল—যা’ আমাদের হাত-পা বেঁধে পঙ্গু, দুর্বল ক’রে রেখেছে, আমাদের আঘাত দেবার শক্তি লোপ করেছে।

 দিন তিনেক পরে নিকোলাই কারামুক্ত হয়ে পেভেলদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ঘরে আলো দেখতে পেয়ে সে এসে ঢুকলো, বলো, আমি সোজা জেল থেকে আসছি, মা।

 তার কণ্ঠস্বর অদ্ভুত, দৃষ্টি বিষণ্ণ, সন্দিগ্ধ! মা কোনদিনই তাকে পছন্দ করতেন না, কিন্তু আজ এই ছেলেটির দিকে চেয়েও কেমন এক দরদে তাঁর প্রাণ ভরে গেলো, বল্‌লেন, শুকিয়ে আধখানা হ’য়ে গেছিস যে, বাবা! দাঁড়া, চা করে দিচ্ছি।

 এণ্ড্রি রান্নাঘর থেকে ব’লে উঠলো, আমিই কচ্ছি চা!

 মা তখন বলেন, ফেদিয়া মেজিন কেমন আছে রে? কবিতা লিখছে, না?

 নিকোলাই মাথা নেড়ে বলে, হাঁ, কিন্তু আমি ছাই কিছু বুঝিনা তা’। একটা খাঁচায় রেখেছে তাকে, আর সে গান করছে। একটা জিনিস আমি খাঁটি বুঝেছি—আর বাড়ি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই আমার।

৮২