পাতা:মুক্তধারা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উত্তরকূটের যুবরাজ অভিজিৎ যন্ত্ররাজ বিভূতির নিকট দূত পাঠাইয়াছেন। বিভূতি যখন
মন্দিরের দিকে চলিয়াছে তখন দূতের সহিত তাহার সাক্ষাৎ

 দূত। যন্ত্ররাজ বিভূতি, যুবরাজ আমাকে পাঠিয়ে দিলেন।

 বিভূতি। কী তাঁর আদেশ?

 দূত। এতকাল ধরে তুমি আমাদের মুক্তধারার ঝর্নাকে বাঁধ দিয়ে বাঁধতে লেগেছ। বারবার ভেঙে গেল, কত লোক ধুলোবালি চাপা পড়ল, কত লোক বন্যায় ভেসে গেল। আজ শেষে—

 বিভূতি। তাদের প্রাণ দেওয়া ব্যর্থ হয় নি। আমার বাঁধ সর্ম্পূণ হয়েছে।

 দূত। শিবতরাইয়ের প্রজারা এখন এ খবর জানে না। তারা বিশ্বাস করতেই পারে না যে, দেবতা তাদের যে জল দিয়েছেন কোনো মানুষ তা বন্ধ করতে পারে।

 বিভূতি। দেবতা তাদের কেবল জলই দিয়েছেন, আমাকে দিয়েছেন জলকে বাঁধবার শক্তি।

 দূত। তারা নিশ্চিন্ত আছে, জানে না আর সপ্তাহ পরেই তাদের চাষের খেত—

 বিভূতি। চাষের খেতের কথা কী বলছ?

 দূত। সেই খেত শুকিয়ে মারাই কি তোমার বাঁধ বাঁধার উদ্দেশ্য ছিল না?

 বিভূতি। বালি-পাথর-জলের ষড়যন্ত্র ভেদ করে মানুষের বুদ্ধি হবে জয়ী এই ছিল উদ্দেশ্য। কোন্‌ চাষির কোন্‌ ভুট্টার খেত মারা যাবে সে-কথা ভাববার সময় ছিল না।

 দূত। যুবরাজ জিজ্ঞাসা করছেন এখনো কি ভাববার সময় হয় নি?

 বিভূতি। না, আমি যন্ত্রশক্তির মহিমার কথা ভাবছি।

১২