পাতা:মুক্তধারা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পূজার নৈবেদ্য লইয়া একজন বিদেশী পথিকের প্রবেশ
উত্তরকূটের নাগরিককে সে প্রশ্ন করিল

 পথিক। আকাশে ওটা কী গড়ে তুলেছে? দেখতে ভয় লাগে।

 নাগরিক। জান না? বিদেশী বুঝি? ওটা যন্ত্র।

 পথিক। কিসের যন্ত্র?

 নাগরিক। আমাদের যন্ত্ররাজ বিভূতি পঁচিশ বছর ধরে যেটা তৈরি করছিল সেটা ওই তো শেষ হয়েছে, তাই আজ উৎসব।

 পথিক। যন্ত্রের কাজটা কী?

 নাগরিক। মুক্তধারা ঝর্নাকে বেঁধেছে।

 পথিক। বাবা রে। ওটাকে অসুরের মাথার মতো দেখাচ্ছে, মাংস নেই, চোয়াল ঝোলা। তোমাদের উত্তরকূটের শিয়রের কাছে অমন হাঁ করে দাঁড়িয়ে; দিনরাত্তির দেখতে দেখতে তোমাদের প্রাণপুরুষ যে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে।

 নাগরিক। আমাদের প্রাণপুরুষ মজবুত আছে, ভাবনা করো না।

 পথিক। তা হতে পারে, কিন্তু ওটা অমনতরো সূর্যতারার সামনে মেলে রাখবার জিনিস নয়, ঢাকা দিতে পারলেই ভালো হত। দেখতে পাচ্ছ না যেন দিনরাত্তির সমস্ত আকাশকে রাগিয়ে দিচ্ছে?

 নাগরিক। আজ ভৈরবের আরতি দেখতে যাবে না?

 পথিক। দেখব বলেই বেরিয়েছিলুম। প্রতি বৎসরই তো এই সময় আসি, কিন্তু মন্দিরের উপরের আকাশে কখনো এমনতরো বাধা দেখি নি। হঠাৎ ঐটের দিকে তাকিয়ে আজ আমার গা শিউরে উঠল—ও যে অমন করে মন্দিরের মাথা ছাড়িয়ে গেল এটা যেন স্পর্ধার মতো দেখাচ্ছে। দিয়ে আসি নৈবেদ্য, কিন্তু মন প্রসন্ন হচ্ছে না।

প্রস্থান