নিজের স্বাক্ষর সাক্ষিরূপে সংযুক্ত করিয়া দেয়। বুলাকীদাসের মৃত্যু হইলে কোম্পানীর নিকট পাওনা টাকা হইতে নন্দকুমার সেই অঙ্গীকারের বলে, বুলালীদাসের সম্পত্তির একজিকিউটার পদ্মমোহন দাসের সম্মতিতে সেই টাকা পরিশোধ করিয়া লন। মোহনপ্রসাদ সমস্ত বিষয়ই জানিত। ক্রমে ক্রমে অঙ্গীকার-পত্রের সমস্ত সাক্ষীর ও পদ্মমোহনের মৃত্যু হইলে, গঙ্গাবিষ্ণু নামে বুলাকীদাসের একজন আত্মীয় ও বুলাকীদাসের বিধবা পত্নী তাহার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। মোহনপ্রসাদ তাঁহাদেরও আমমোক্তাররূপে কার্য করিতে থাকে।
হেস্টিংস এই মোহনপ্রসাদের সহিত যোগ দিয়া নন্দকুমারের নামে এক জাল করা মোকর্দমা উপস্থাপিত করিলেন। নন্দকুমার বুলাকীদাসের নামে অঙ্গীকার-পত্র জাল করিয়াছেন এবং মিথ্যা করিয়া তাহার উত্তরাধিকারিগণের নিকট হইতে অর্থ লইয়াছেন বলিয়া, মোকর্দমা উপস্থাপিত করা হয়। জাল-করা মোকর্দমায় সরকারই বাদী, এবং তৎকালে তাহাতে প্রাণদণ্ড পর্যন্ত শাস্তি হইত। ষড়যন্ত্রের মোকর্দমায় ফল হইবে না বুঝিয়া, হেস্টিংস এই ভীষণ মিথ্যা মোকর্দমার সৃষ্টি করিলেন। নন্দকুমারের সহিত বুলাকীদাসের হিসাবপত্র লইয়া দেওয়ানী আদালতে গঙ্গাবিষ্ণু এক মোকর্দমা আনয়ন করে; মোহনপ্রসাদ তাহার তদ্বিরকারক ছিল। সেই মোকর্দমার নিম্পত্তি হইতে না হইতে, হেস্টিংসের পরামর্শে ফৌজদারী মোকর্দমা উপস্থাপিত করা হইল।
নন্দকুমারের নামে সুপ্রীমকোর্টে অভিযোগ উপস্থিত হইলে, জজেরা ১৭৭৫ খ্রীঃ অব্দের ৬ই মে রাত্রি দশটার সময় তাঁহাকে জেলে পাঠাইলেন। নন্দকুমার একজন নিষ্ঠাবান হিন্দু ছিলেন। জেলে থাকিলে তাঁহার স্নানাহ্নিক ও আহারাদির অসুবিধা হইবে বলিয়া, তাঁহার পক্ষীয়েরা আবেদন করিলে, এমন কি কাউন্সিলের সভ্যেরাও তজ্জন্য অনুরোধ করিয়া পাঠাইলে, জজেরা সে কথায় কর্ণপাত করিলেন না। অধিকন্তু তাঁহারা তৎকালীন কোন কোন পণ্ডিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া জানাইলেন যে, ইহাতে নন্দকুমারের জাতি নষ্ট হইবে না। কৃষ্ণজীবন শর্মা, বাণেশ্বর শর্মা, কৃষ্ণগোপাল শর্মা ও গৌরীকান্ত শর্মা ব্যবস্থা প্রদান করেন। তাহারা তাঁহারা বলেন যে, এক কারাগারে এক ছাদের নীচে ব্রাহ্মণ ও মুসলমান প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন জাতি থাকিলেও, ব্রাহ্মণ যদি পৃথক গৃহে থাকেন, তাহাতে তাঁহার জাতি যায় না; কিন্তু রাজাজ্ঞায় ব্রাহ্মণ কারাগারে থাকিয়া পানাহার করিলে, তাঁহার প্রায়শ্চিত্তের আবশ্যক হয়। তথাপি ভিন্ন ছাদের নীচে পৃথক গৃহে থাকিয়া, আহারাদি করিলে সামান্য প্রায়শ্চিত্তই যথেষ্ট। মুসলমান প্রভৃতি এক ছাদের নীচে অথচ ভিন্ন ঘরে থাকিলে, ব্রাহ্মণ স্নানাহ্নিক আহারাদি করিতে পারেন না; যদি তিনি সন্ধ্যাহ্নিক বা আহারাদি করেন, তাহাতে তাঁহার জাতি যায় না; কিন্তু প্রায়শ্চিত্ত করিতে হয়। পণ্ডিতদিগকে মহারাজের কারাগৃহ দেখাইলে তাঁহারা বলেন যে, মহারাজ নন্দকুমার এরূপ স্থলে আহার করিতে পারেন না; যদি