পাতা:মৃণালিনী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ যবনদূত—যমদূত বা বেলা প্রহরেকের সময় নগরবাসীরা বিস্মিতলোচনে দেখিল, কোন অপরিচিতজাতীয় সপ্তদশ অশ্বারোহী পুরুষ রাজপথ অতিবাহিত করিয়া রাজভবনাভিমুখে যাইতেছে। তাহাদিগের আকারেঙ্গিত দেখিয়া নবদ্বীপবাসীরা ধন্যবাদ করিতে লাগিল । তাহাদিগের শরীর আয়ত, দীর্ঘ অথচ পুষ্ট , তাহাদিগের বর্ণ তপ্তকাঞ্চনসন্নিভ ; তাহাদিগের মুখমণ্ডল বিস্তৃত, ঘনকৃষ্ণশশুরাজিবিভূষিত; নয়ন প্রশস্ত, জ্বালাবিশিষ্ট। তাহাদিগের পরিচ্ছদ অনর্থক চাকুচিক্যবিবর্জিত ; তাহাদিগের যোদ্ধবেশ, সৰ্ব্বাঙ্গে প্রহরণঙ্গালমণ্ডিত, লোচনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর যে সকল সিন্ধুপার-জাত অশ্বপুষ্ঠে তাহারা আরোহণ করিয়া যাইতেছিল, তাহারাই বা কি মনোহর | পৰ্ব্বতশিলাখণ্ডের স্থায় বৃহদাকার, বিমাজ্জিতদেহ, বক্রগ্রীব, বল্লারোধ-অসহিষ্ণু, তেজোগৰ্ব্বে নৃত্যশীল ! আরোহীরা কিবা তচ্চালনকৌশলী—অবলীলাক্রমে সেই রুদ্ধবায়ুতুল্য তেজঃপ্রখর অশ্ব সকল দমিত করিতেছে। দেখিয়া গোঁড়বাসীরা বহুতর প্রশংসা করিল। সপ্তদশ অশ্বারোহী দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় অধরেীষ্ঠ সংশ্লিষ্ট করিয়া নীরবে রাজপুরাপ্তিযুখে চলিল। কৌতূহলবশতঃ কোন নগরবাসী কিছু জিজ্ঞাসা করিলে, সমভিব্যাহার একজন ভাষাজ্ঞ ব্যক্তি বলিয়া দিতে লাগিল, “ইহার যবন রাজার দূত।" এই বলিয়া ইহার প্রাস্তুপাল ও কোষ্ঠপালদিগের নিকট পরিচয় দিয়াছিল—এবং পশুপতির আজ্ঞাক্ৰমে সেই পরিচয়ে নিৰ্ব্বিত্বে নগরমধ্যে প্রবেশ লাভ করিল। সপ্তদশ অশ্বারোহী রাজদ্বারে উপনীত হইল। বৃদ্ধ রাজার শৈথিল্যে আর পশুপতির কৌশলে রাজপুরী প্রায় রক্ষকহীন। রাজসভা ভঙ্গ হইয়াছিল—পুরীমধ্যে কেবল পৌরজন ছিল মাত্র—অল্পসংখ্যক দৌবারিক দ্বার রক্ষা করিতেছিল। একজন দেীবারিক জিজ্ঞাসা করিল, “তোমরা কি জষ্ঠ আসিয়াছ ?” * যবনের উত্তর করিল, “আমরা যবন-রাজপ্রতিনিধির যুক্ত ; গৌড়রাজের সহিত সাক্ষাৎ করিব।” - - - দেীবারিক কহিল, “মহারাজাধিরাজ গৌড়েশ্বর এক্ষণে অন্তঃপুরে গমন করিয়াছেন— এখন সাক্ষাং হুইবে না।” - -