পাতা:মৃণালিনী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধাতুমূৰ্ত্তির বিসর্জন ১২% সহসা অনৈসর্গিক ভয় আসিয়া ভঁাহার হৃদয় আচ্ছন্ন করিঙ্গ—আকারণ ভয়ে তিনি আর পদক্ষেপ করিতে পারিলেন না । সহসা বলহীন হইলেন। বিশ্রাম করিবার জন্য পথিমধ্যে উপবেশন করিতে গিয়া দেখিলেন—এক শবাসনে উপবেশন করিতেছিলেন। শবনিশ্রুত রক্ত উহার বসনে এবং অঙ্গে লাগিল। তিনি কণ্টকিতকলেবরে পুনরুখান করিলেন। আর দাড়াইলেন না—দ্রুতপদে চলিলেন। সহসা আর এক কথা মনে পড়িল—র্তাহার নিজৰাটী ? তাহ কি যবনহস্তে রক্ষা পাইয়াছে ? আর সে বাটতে যে কুসুমময়ী প্রাণ-পুত্তলিকে লুকাইয়। রাখিয়াছিলেন, তাহার কি হইয়াছে ? মনোরমার কি দশ। হইয়াছে ? তাহার প্রাণাধিক, তাহাকে পাপপথ হইতে পুনঃ পুনঃ নিবারণ করিয়াছিল, সেও বুঝি তাহার পাপসাগরের তরঙ্গে ডুবিয়াছে। এ যবনসেনাপ্রবাহে সে কুস্বমকলিকা না জানি কোথায় ভাসিয়া গিয়াছে । পশুপতি উন্মত্তের স্তায় আপন ভবনাভিমুখে ছুটিলেন। আপনার ভবনসম্মুখে উপস্থিত হইলেন। দেখিলেন, যাহ। ভাবিয়াছিলেন, তাহাই ঘটিয়াছে—জ্বলন্ত পৰ্ব্বতের স্বায় তাহার উচ্চচূড় অট্টালিকা অগ্নিময় হইয়া জ্বলিতেছে। দৃষ্টিমাত্র হতভাগ্য পশুপতির প্রতীতি হইল যে, যবনের তাহার পৌরজন সহ মনোরমাকে বধ করিয়া গৃহে অগ্নি দিয়া গিয়াছে। মনোরম যে পলায়ন করিয়াছিল, তাহা তিনি কিছু জানিতে পারেন নাই । নিকটে কেহই ছিল না যে, তাহাকে এ সংবাদ প্রদান করে । আপন বিকল চিত্তের সিদ্ধাস্তই তিনি গ্রহণ করিলেন। হয় হল-কলস পরিপূর্ণ হইল—হৃদয়ের শেষ তন্ত্রী ছিড়িল । তিনি কিয়ৎক্ষণ বিস্ফারিত নয়নে দহমান অট্টালিক প্রতি চাহিয়া রহিলেন— মরণোন্মুখ পতঙ্গবং আল্লক্ষণ বিকলশরীরে একস্থানে অবস্থিতি করিলেন-শেষে মহাবেগে সেই অনলতরঙ্গমধ্যে বাপ দিলেন। সঙ্গের প্রহরী চমকিত হইয়া রহিল। মহাবেগে পশুপতি জ্বলন্ত দ্বারপথে পুরমধ্যে প্রবেশ করিলেন। চরণ দক্ষ হইল— অঙ্গ দগ্ধ হইল—কিন্তু পশুপতি ফিরিলেন না। অগ্নিকুও অতিক্রম করিয়া আপন শয়নকক্ষে গমন করিলেন-কাহাকেও দেখিলেন না। দগ্ধশরীরে কক্ষে কক্ষে ছুটিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। র্তাহার অন্তরমধ্যে যে ছুরন্তু অগ্নি জ্বলিতেছিল—তাহাতে তিনি বাহ দাহযন্ত্রণা অনুভূত করিতে পারিলেন না। ক্ষণে ক্ষণে গৃহের নূতন নূতন খণ্ড সকল অগ্নিকর্তৃক আক্রান্ত হইতেছিল। আক্রান্ত প্রকোষ্ঠ বিষম শিখ আকাশপথে উত্থাপিত করিয়া ভয়ঙ্কর গর্জন করিতেছিল।. ক্ষণে ক্ষণে