পাতা:মৃণালিনী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

德 ه/ه কিয়প প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল, এই আলোচনা হইতেই বুঝা যাইবে। আমরা এখানে অংশতঃ রাজেন্দ্রলালের আলোচনাটি উদ্ধৃত করিতেছি—

পুস্তক খানি অতিক্ষুদ্রায়তন ; ২৪১ পৃষ্ঠামাত্র ইহার পরিমাণ, এবং তাছাও বিরল অক্ষরে ব্যাপ্ত। পরন্তু ইহার আয়তনের সহিত ইহার গৌরবের কোন সমতা নাই । বঙ্গভাষায় যে সকল গ্রন্থ প্রস্তুত হইয়াছে আমরা তাহার অধিকাংশই পাঠ করিয়াছি ; বোধ হয় এমত কোন বাঙ্গালী ভদ্র পুস্তক নাই যাহা আমাদিগের নয়নগোচর হয় নাই ; এবং স্বভাবতঃ ও সমালোচকের ধৰ্ম্মরক্ষার্থে আমরা পুস্তকের দোষ-গুণ-বিচারে সর্বদা অকুরত্ব । এই প্রকারে বিবিধ গ্রন্থের আলোচনানন্তর আমরা মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করিতে পারি যে বঙ্গভাষায় গদ্যে মৃণালিনীর সদৃশ মুচারু গ্রন্থ অস্থাপি মুদ্রিত হয় নাই ; এবং যে কোন ভাষায় গ্রন্থকার ঐরুপ রম্য রচনা নিম্পন্ন করিলে বিশেষ প্রশংসার ভাজন হইতেন । সাধারণের একটা সংস্কার আছে যে নব্য সম্প্রদায় ইংরাজীর অহরাগে সৰ্ব্বদা ব্যাপৃত থাকায় স্বদেশভাষার নিতান্ত অবজ্ঞা করেন, সুতরাং তাহার উন্নতি-সাধনে বা তাহাতে সন্ত্রচনায় সৰ্ব্বতোভাবে অক্ষম। ত্রযুক্ত বঙ্কিম বাবু সে কুসংস্কারের একেবারে উন্মূলন করিয়াছেন। তিনি বাল্যকালাবধি ইংরাজীর অম্বুরাগী ; ২৩ বৎসর বয়ক্রম পৰ্য্যন্ত বিদেশীয় ভাষারই সৰ্ব্বদা অনুশীলন করিয়া তাহাতে বি, এ, উপাধি প্রাপ্ত হন। তৎকালমধ্যে বাঙ্গালীর অল্প মাত্র অনুধাবন করিয়াছিলেন, এবং বোধ হয়, সংস্কৃতে তিনি অভিজ্ঞ নহেন। অপর বিদ্যাশিক্ষার পর তিনি বিষয়ুকৰ্ম্মে ব্যাপৃত হইয় ইংরাজীরই সৰ্ব্বদা আলোচনা করিয়াছেন, এবং আদৌ ইংরাজীতেই রচনাচাতুর্ঘ্য-প্রকাশার্থে কোন ইংরাজী সংবাদ পত্রে উপন্যাস প্রকাশে প্রবৃত্ত হন। তত্ৰাপি তিনি বাঙ্গালী ভাষায় যে প্রকার পুস্তক রচনা করিয়াছেন, তাহা কোন মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিতদ্বারা অদ্যাপি নিম্পন্ন হয় নাই। বহু কালাবধি বঙ্গভাষায় উপন্যাসের নাম শুনিলে শ্রোতার মনে বেতাল পচিশ বা বত্রিশসিংহাসন মনে পড়িত । ইংরাজীতে স্বশিক্ষিত ব্যক্তির কএক বৎসরাবধি তাহার অন্তথা চেষ্টায় ভূত-প্রেতের পরিবর্তে মাসিক ঘটনার উপন্যাস রচনায় প্রবৃত্ত হন ; এবং কএক খানি সুচারু পুস্তকও প্রস্তুত করিয়াছেন । কিন্তু কেহই ইংরাজীর প্রকৃত নবেলের পারিপাট্য লাভ করিতে পারেন নাই। বঙ্কিম বাবুও সেই অম্বুরাগের অম্বুরাগী ; এবং ইংরাজী উপন্যাস লেখকের মধ্যে স্কুটু-নাম এক জন শ্রেষ্ঠতমকে আদর্শ স্বীকার করিয়া পর পর তিন খানি গ্রন্থ প্রস্তুত করিয়াছেন, এবং পরম আহলাদের বিষয় এই যে তাহাতে তিনি সৰ্ব্বতোভাবে সিদ্ধসঙ্কল্প হইয়াছেন ; অধিকন্তু যে কেহ ঐ তিন খানি গ্রন্থ পাঠ করিয়াছেন তেঁহ অবশ্বই স্বীকার করিবেন যে তাহার রচনাচাতুৰ্য্যের ও গল্পবিন্যাসের ক্ষমতা উত্তরোত্তর সমধিক উৎকৃষ্টতালাভ করিয়াছে —‘বৃহন্ত-সম্বর্ত, ১৯২৭ সংৰং, ৫৭ খণ্ড, পৃ. ১৪২ ৷