তিনি কি নৈশ শোভা দৃষ্টি করিতে ছিলেন? যদি তাঁহাকে সে সময়ে কেহ জিজ্ঞাসা করিত যে রাত্র সজ্যোৎস্না কি অন্ধকার, তাহা তিনি তখন সহসা বলিতে পারিতেন না। তাঁহার হৃদয় মধ্যে যে রজনীর উদয় হইয়াছিল, তিনি কেবল তাহাই দেখিতেছিলেন। সে রাত্রি ত তখনও সজ্যোৎস্না! নহিলে তাঁহার উপাধান আর্দ্র কেন? কেবল মেঘোদয় মাত্র। যাহার হৃদয়-আকাশে অন্ধকার বিরাজ করে সে রোদন করে না।
যে কখন রোদন করে নাই, সে মনুষ্যমধ্যে অধম। তাহাকে বিশ্বাস করিও না। নিশ্চিত জানিও সে পৃথিবীর সুখ কখন ভোগ করে নাই—পরের সুখও কখন তাহার সহ্য হয় না। এমত হইতে পারে, যে কোন আত্মচিত্তবিজয়ী মহাত্মা বিনা বাস্পমোচনে গুরুতর মনঃপীড়া সকল সহ্য করিতেছেন, এবং করিয়া থাকেন; কিন্তু তিনি যদি কস্মিন্ কালে, এক দিন বিরলে, একবিন্দু অশ্রুজলে পৃথিবী সিক্ত না করিয়া থাকেন, তবে তিনি চিত্তজয়ী মহাত্মা হইলে হইতে পারেন, কিন্তু আমি বরং চোরের সহিত প্রণয় করিব, তথাপি তাঁহার সঙ্গে নহে।
হেমচন্দ্র রোদন করিতেছিলেন,—যে স্ত্রীকে পাপিষ্ঠা, মনে স্থান দিবার অযোগ্য বলিয়া জানিয়াছিলেন, তাহার জন্য রোদন করিতেছিলেন। মৃণালিনীর কি তিনি দোষ আলোচনা করিতেছিলেন? তাহা করিতেছিলেন বটে, কিন্তু কেবল তাহাই নহে। এক একবার মৃণালিনীর প্রেমপরিপূর্ণ মুখমণ্ডল, প্রেমপরিপূর্ণ বিস্তীর্ণ নেত্র, প্রেম পরিপূর্ণ কথা, প্রেম পরিপূর্ণ কার্য্য সকল মনে করিতেছিলেন। এক দিন মথুরায়, হেমচন্দ্র মৃণালিনীর নিকট একখানি লিপি প্রেরণ করিবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছিলেন, উপযুক্ত বাহক পাইলেন না; কিন্তু মৃণালিনীকে গবাক্ষ পথে দেখিতে পাইলেন। তখন হেমচন্দ্র একটী আম্র