পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অমৃতে গরল—গরলামৃত।
১৩৩

আসিয়া উপস্থিত হইলেন, তখন তিনি পথশ্রান্তিতে প্রায় নির্জ্জীব; চরণ ক্ষত বিক্ষত; রুধির বহিতেছিল। সেই রাত্রিতেই মৃণালিনী পিতার ভয়ে প্রত্যাবর্ত্তন করিলেন। গৃহে আসিয়া তিনি স্বয়ং পীড়িতা হইলেন। হেমচন্দ্রের তাহাও মনে পড়িল। আর কত দিনের কত কথা মনে পড়িল। সেই সকল কথা মনে করিয়া হেমচন্দ্র কাঁদিতেছিলেন, শত বার আপনি প্রশ্ন করিতেছিলেন, “সেই মৃণালিনী অবিশ্বাসিনী—ইহা কি সম্ভব?” শতবার ভাবিতেছিলেন, “কেন আমি মৃণালিনীর পত্র পড়িলাম না? নবদ্বীপে কেন আসিয়াছে তাহাই বা কেন জানিলাম না? তাহা হইলে এ সংশয়ের মোচন হইত।” পত্র খণ্ড গুলিন যে বনে নিক্ষিপ্ত করিয়াছিলেন, তাহা যদি সেখানে পাওয়া যায় তবে তাহা মুক্ত করিয়া যতদূর পারেন, ততদূর মর্ম্মাবগত হইবেন; এইরূপ প্রত্যাশা করিয়া এক বার সেই বন পর্য্যন্ত গিয়াছিলেন, কিন্তু সেখানে বনতলস্থ অন্ধকারে কিছুই দেখিতে পায়েন নাই। বায়ু লিপিখণ্ড সকল উড়াইয়া লইয়া গিয়াছিল। যদি তখন আপন দক্ষিণ বাহু ছেদন করিয়া দিলে হেমচন্দ্র সেই লিপিখণ্ড গুলিন পাইতেন তবে হেমচন্দ্র তাহাও দিতেন।

 আবার ভাবিতে ছিলেন, “আচার্য্য কেন মিথ্যা কথা বলিবেন। আচার্য্য অত্যন্ত সত্যনিষ্ঠ—কখন মিথ্যা বলিবেন না। বিশেষ আমাকে পুত্রাধিক স্নেহ করেন—জানেন এ সম্বাদে আমার মরণাধিক যন্ত্রণা হইবে, কেন আমাকে তিনি মিথ্যা কথা বলিয়া এত যন্ত্রণা দিবেন? আর তিনিও স্বেচ্ছাক্রমে এ কথা বলেন নাই। আমি সদর্পে তাঁহার নিকট কথা বাহির করিয়া লইলাম—যখন আমি বলিলাম যে আমি সকলই অবগত আছি—তখনই তিনি কথা বলিলেন। মিথ্যা বলিবার উদ্দেশ্য থাকিলে বলিতে অনিচ্ছুক হইবেন কেন? তবে হইতে পারে,