পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
মৃণালিনী।

 মৃণালিনী তথাপি উত্তর করিতে পারিলেন না। হেমচন্দ্র তাঁহার হস্ত ধারণ করিয়া সোপানোপরি বসাইলেন, স্বয়ং নিকটে বসিলেন। মৃণালিনীর যে কিছু চিত্তের স্থিরতা ছিল, এই আদরে তাহা লোপ হইল। ক্রমে ক্রমে, তাঁহার মস্তক আপনি আসিয়া হেমচন্দ্রের স্কন্ধে স্থাপিত হইল, মণালিনী তাহা জানিমাও জানিতে পারিলেন না। কিন্তু আবার রোদন করিলেন— তাঁহার অশ্রুজলে হেমচন্দ্রের স্বন্ধ আর বক্ষঃ প্লাবিত হইল। এ সংসারে মৃণালিনী যত সুখ অনুভূত করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে কোন সুখই এই রোদনের তুল্য নহে।

 হেমচন্দ্র আবার কথা কহিলেন। “মৃণালিনি! আমি তোমার নিকট গুরুতর অপরাধ করিয়াছি। সে অপরাধ আমায় ক্ষমা করিও। আমি তোমার নামে কলঙ্করটনা শুনিয়া তাহা বিশ্বাস করিয়াছিলাম। বিশ্বাস করিবার কতক কারণও ঘটিয়াছিল—তাহা তুমি দূর করিতে পারিবে। যাহা আমি জিজ্ঞাসা করি তাহার পরিষ্কার উত্তর দাও।”

 মৃণালিনী হেমচন্দ্রের স্কন্ধ হইতে মস্তক না তুলিয়া কহিলেন “কি?”

 হেমচন্দ্র বলিলেন, “তুমি হৃষীকেশের গৃহত্যাগ করিলে কেন?”

 ঐ নাম শ্রবণমাত্র কুপিতা ফণিনীর ন্যায় মৃণালিনী মস্তকোত্তোলন করিলেন। কহিলেন, “হৃষীকেশ আমাকে গৃহ হইতে বিদায় করিয়া দিয়াছে।”

 হেমচন্দ্র ব্যথিত হইলেন—অল্প সন্দিহান হইলেন—কিঞ্চিৎ চিন্তা করিলেন। এই অবকাশে মৃণালিনী পুনরপি হেমচন্দ্রের স্কন্ধে মস্তক রাখিলেন। সে সুখাসনে শিরোরক্ষা এত সুখ, যে মৃণালিনী তাহাতে বঞ্চিত হইয়া থাকিতে পারিলেন না।