পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
মৃণালিনী।

 আমরা পাঠক মহাশয়ের নিকট পশুপতিকে বুদ্ধিমান্ বলিয়া পরিচিত করিয়াছি। পাঠক মহাশয় বলিবেন, যে ব্যক্তি শত্রুকে এতদূর বিশ্বাস করিল, সহায়হীন হইয়া তাহাদিগের অধিকৃত পুরীমধ্যে প্রবেশ করিল তাহার চতুরতা কোথায়? কিন্তু বিশ্বাস করিয়া কি করেন। এ বিশ্বাস না করিলে যুদ্ধ করিতে হয়। ঊর্ণনাভ জাল পাতে, যুদ্ধ করে না।

 সেই দিন রাত্রিকালে মহাবন হইতে বিংশতি সহস্র যবন আসিয়া নবদ্বীপ প্লাবিত করিল। বঙ্গজয় সম্পন্ন হইল। যে সূর্য্য সেই দিন অস্তে গিয়াছে, আর তাহার উদয় হইল না। আর কি উদয় হইবে না? উদয় অস্ত উভয়ই ত স্বাভাবিক নিয়ম। আকাশের সামান্য নক্ষত্রটাও অস্ত গেলে পুনরুদিত হয়।


ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।


পিঞ্জর ভাঙ্গিল।

 যতক্ষণ পশুপতি গৃহে ছিলেন ততক্ষণ তিনি মনোরমাকে চক্ষে চক্ষে রাখিয়াছিলেন। যখন তিনি যবনদর্শনে গেলেন, তখন তিনি গৃহের সকল দ্বার রুদ্ধ করিয়া শান্তশীলকে গৃহ রক্ষায় রাখিয়া গেলেন।

 পশুপতি যাইবা মাত্র, মনোরমা পলায়নের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। গৃহের কক্ষে কক্ষে অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন। পলায়নের উপযুক্ত কোন পথ মুক্ত দেখিলেন না। অতি উর্দ্ধে কতকগুলিন গবাক্ষ ছিল; কিন্তু তাহা দুরারোহণীয়; তাহার মধ্য দিয়া মনুষ্য শরীর নির্গত হইবার সম্ভাবনা ছিল না; আর