পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রেম—নানা প্রকার।
১৭৩

দেখি মাগী আমাকে খুঁজিয়া লয় কি না?” ইহা ভাবিয়া দিগ্বিজয় এক নিভৃত স্থানে গিয়া শয়ন করিল। গিরিজায়া তাহা দেখিল।

 দুর্ভাগ্যক্রমে দিগ্বিজয় রাত্রিজাগরণে ক্লান্ত ছিল শয়ন মাত্র নিদ্রাভিভূত হইয়া সকল বিস্মৃত হইল। গিরিজায়া তখন মনে মনে বলিতে লাগিল, “আমি ত মৃণালিনীর দাসী—মৃণালিনী এ গৃহের কর্ত্রী হইলেন অথবা হইবেন—তবে ত বাড়ীর গৃহকর্ম্ম করিবার অধিকার আমারই। এইরূপ মনকে প্রবোধ দিয়া গিরিজায়া একগাছা ঝাঁটা সংগ্রহ করিল এবং যে ঘরে দিগ্বিজয় শয়ন করিয়া আছে সেই ঘরে প্রবেশ করিল। দিগ্বিজয় চক্ষু বুজিয়া আছে, পদধ্বনিতে বুঝিল যে গিরিজায়া আসিল—মনে বড় আনন্দ হইল—তবেত গিরিজায়া তাঁহাকে ভাল বাসে? দেখি গিরিজায়া কি বলে? এই ভাবিয়া দিগ্বিজয় চক্ষু বুজিয়াই রহিল। অকস্মাৎ তাহার পৃষ্ঠে দুম্ দাম্ করিয়া ঝাঁটার ঘা পড়িতে লাগিল। “আঃ মলো ঘর গুলায় ময়লা জমিয়া রহিয়াছে দেখ—এ কি? এক মিন্সে চোর নাকি? মলো মিন্সে! রাজার ঘরে চুরি!” এই বলিয়া আবার সম্মার্জ্জনীর আঘাত। দিগ্বিজয়ের পিট ফাটিয়া গেল।

 “ও গিরিজায়া—আমি! আমি!” “আমি! আমি! আরে তুই বলিয়াই ত খাঙ্গরা দিয়া বিছাইয়া দিতেছি।” এই বলিবার পর আবার বিরাশী সিল্কা ওজনে ঝাঁটা পড়িতে লাগিল।

 “দোহাই! দোহাই! গিরিজায়া! অমি দিগ্বিজয়।” (আবার চুরি করিতে এসে আমি দিগ্বিজয়! দিগ্বিজয় কেরে মিন্সে।” ঝাঁটার বেগ আর থামে না।

 দিগ্বিজয় এবার সকাতরে কহিল, “গিরিজায়া আমাকে একেবারে ভুলিয়া গেলে?”

ণ৩