পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পূর্ব্ব পরিচয়।
১৭৫

 মৃ। “এত দিন রাজপুত্রের নিষেধ ছিল এজন্য প্রকাশ করি নাই। এক্ষণে তিনি প্রকাশে অনুমতি করিয়াছেন এজন্য প্রকাশ করিতেছি।”

 গি। “ঠাকুরাণি! যদি আদ্যোপান্ত প্রকাশ করিতে অনিচ্ছা না হয়, তবে আমার শুনিয়া বড় তৃপ্তি হয়।”

 তখন মৃণালিনী বলিতে আরম্ভ করিলেন।

 “আমার পিতা একজন বৌদ্ধমতাবলম্বী শ্রেষ্ঠী। তিনি অত্যন্ত ধনী ও মথুরারাজের প্রিয়পাত্র ছিলেন। মথুরার রাজকন্যার সহিত আমার সখীত্ব ছিল।

 আমি একদিন মথুরার রাজকন্যার সহিত নৌকারোহণে যমুনায় জলবিহারে গিয়াছিলাম। তথায় অকস্মাৎ প্রবল ঝটিকারন্ত হওয়ায়, নৌকা জলমধ্যে নিমগ্ন হইল। রাজ কন্যা প্রভূতি অনেকেই রক্ষক এবং নাবিকদিগের হস্তে রক্ষা পাইলেন। আমি ভাসিয়া গেলাম। দৈবযোগে এক রাজপুত্র সেই সময়ে নৌকারোহণে ছিলেন। তাঁহাকে তৎকালে চিনিতাম না—তিনিই হেমচন্দ্র। তিনিও বায়ুর প্রবলতার কারণ নৌকা তীরে লইতে ছিলেন। জলমধ্যে আমার চুল দেখিতে পাইয়া স্বয়ং জলে পড়িয়া আমাকে উঠাইলেন। আমি তখন অজ্ঞান। হেমচন্দ্র আমার পরিচয় জানিতেন না। তিনি তখন তীর্থ দর্শনে মথুরায় আসিয়াছিলেন। তাঁহার বাসার্থ একটি স্বতন্ত্র গৃহ ছিল। তথায় আমায় লইয়া গিয়া শুশ্রুষা করিলেন। আমি জ্ঞানপ্রাপ্ত হইলে, তিনি আমার পরিচয় লইয়া আমাকে আমার পিতৃভবনে পাঠাইবার উদ্যোগ করিলেন। কিন্তু তিন দিবস পর্য্যন্ত ঝড় বৃষ্টি থামিল না। এরূপ দুর্দ্দিন হইল যে কেহ বাটীর বাহির হইতে পারে না। সুতরাং তিন দিন আমাদিগের উভয়ে এক গৃহে সহবাস হইল। উভয়ে উভয়ের পরিচয় পাইলাম। কেবল