পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরামর্শ।
১৮১

তোমার মৃত্যুসাধন সঙ্কল্প করিয়াছে। আমার আজ্ঞা তুমি অদ্যই এ নগর ত্যাগ করিবে।”

 হে। “কোথায় যাইব?”

 মা। “আমার সঙ্গে কামরূপ চল।”

 হেমচন্দ্র অধোবদন হইয়া, অপ্রতিভ হইয়া, মৃদু মৃদু কহিলেন, “মৃণালিনীকে কোথায় রাখিয়া যাইবেন?”

 মাধবাচার্য্য বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “সে কি? আমি ভাবিয়াছিলাম যে তুমি কালিকার কথায় মৃণালিনীকে চিত্ত হইতে দূর করিয়াছিলে?”

 হেমচন্দ্র পূর্ব্বের ন্যায় মৃদুভাবে বলিলেন “মৃণালিনী অত্যজ্যা। তিনি আমার পরিণীতা পত্নী।”

 মাধবাচার্য্য চমৎকৃত হইলেন। রুষ্ট হইলেন। ক্ষোভ করিয়া কহিলেন, “আমি ইহার কিছু জানিলাম না?”

 হেমচন্দ্র তখন আদ্যোপান্ত তাহার বিবাহের বৃত্তান্ত বিবরিত করিলেন। শুনিয়া মাধবাচার্য্য কিছুক্ষণ মৌন হইয়া রহিলেন। কহিলেন, “যে স্ত্রী অসদাচারিণী, সে ত শাস্ত্রানুসারে ত্যজ্যা। মৃণালিনীর চরিত্র সম্বন্ধে যে সংশয় তাহা কালি প্রকাশ করিয়াছি।”

 তখন হেমচন্দ্র ব্যোমকেশের বৃত্তান্ত সকল প্রকাশ করিয়া বলিলেন। শুনিয়া মাধবাচার্য্য আনন্দ প্রকাশ করিলেন। কহিলেন,

 “বৎস! বড় প্রীতি পাইলাম। তোমার প্রিয়তমা এবঞ্চ গুণবতী ভার্য্যাকে তোমার নিকট হইতে বিযুক্ত করিয়া তোমাকে অনেক ক্লেশ দিয়াছি। এক্ষণে আশীর্ব্বাদ করিতেছি তোমরা দীর্ঘজীবী হইয়া বহুকাল একত্রে ধর্ম্মাচরণ কর। যদি তুমি এক্ষণে সস্ত্রীক হইয়াছ তবে তোমাকে আর আমি আমার