পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পিঞ্জরের বিহঙ্গিনী।
২১

ক্ষাৎ হইবে। সেই খানে গিয়া ইহার বিহিত উদ্যোগ করা যাইবে। বঙ্গেশ্বরের নিকট আমি পরিচিত আছি।”

 “যে আজ্ঞা” বলিয়া হেমচন্দ্র প্রণাম করিয়া বিদায় হইলেন। যতক্ষণ তাঁহার বীরমূর্ত্তি নয়নগোচর হইতে লাগিল, আচার্য্য ততক্ষণ তৎপ্রতি অনিমিক লোচনে চাহিয়া রহিলেন। আর যখন হেমচন্দ্র অদৃশ্য হইলেন, তখন মাধবাচার্য্য মনে মনে বলিতে লাগিলেন,

 “যাও, বৎস! প্রতিপদে বিজয় লাভ কর! যদি ব্রাহ্মণবংশে আমার জন্ম হয়, তবে তোমার পদে কুশাঙ্কুরও বিধিবে না। মৃণালিনী! মৃণালিনী বিহগীরে আমি তোমারই জন্যে পিঞ্জরে বদ্ধ করিয়া রাখিয়াছি। কিন্তু কি জানি পাছে তুমি তাহার কলধ্বনিতে বিমোহিত হইয়া পরমকার্য্য বিস্মৃত হও, তোমার পরম মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী ব্রাহ্মণ তোমাকে কিছু দিনের জন্য মনঃপীড়া দিতেছে।”


চতুর্থ পরিচ্ছেদ।


পিঞ্জরের বিহঙ্গিনী।

 বাষ্পীয় রথের গতি অতি বিচিত্র। দিল্লীহইতে কলিকাতা আসিতে দুই দিন লাগে না। কিন্তু ইতিহাসলেখকের লেখনীর গতি আরও বিচিত্র। পাঠক মহাশয় এই মাত্র দিল্লীতে; তৎপরেই প্রয়াগে; এক্ষণে আবার প্রাচীন নগরী লক্ষ্মণাবতীতে আসিয়া তাঁহাকে হৃষীকেশ ব্রাহ্মণের গৃহাভ্যন্তরে নেত্রপাত করিতে হইল।

 হৃষীকেশ সম্পন্ন বা দরিদ্র ব্রাহ্মণ নহেন। তাঁহার বাসগৃহের