পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নৌকা-যানে।
৬১

না। ব্রাহ্মণ অসন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন “ব্রাহ্মণীর ঐ বড় দোষ। কাণে কম শােনেন।”


তৃতীয় পরিচ্ছেদ।
নৌকা-যানে।

 হেমচন্দ্র ত উপবন গৃহে সংস্থাপিত হইলেন। আর মৃণালিনী? নির্ব্বাসিতা, পরপীড়িতা, সহায়হীনা মৃণালিনী কোথায়?

 সান্ধ্যগগনে রক্তিম মেঘমালা কাঞ্চনবর্ণ ত্যাগ করিয়া ক্রমে ক্রমে কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করিল। রজনীদত্ত তিমিরাবরণে গঙ্গার বিশাল হৃদয় অস্পষ্টীকৃত হইল। সভামণ্ডলে পরিচারক হস্তজ্বালিত দীপমালার ন্যায় অথবা প্রভাতে উদ্যানকুসুম সমূহের ন্যায়, আকাশে নক্ষত্রগণ ফুটিতে লাগিল। প্রায়ান্ধকারে নদীহৃদয়ে নৈশ সমীরণ কিঞ্চিৎ খরতর বেগে বহিতে লাগিল। তাহাতে রমণীহৃদয়ে নায়ক সংস্পর্শ জনিত প্রকল্পের ন্যায়, নদীবক্ষে তরঙ্গ উত্থিত হইতে লাগিল। কূলে তরঙ্গাভিঘাতজনিত ফেনপুঞ্জে, শ্বেতপুষ্পমালা গ্রন্থিত হইতে লাগিল। বহুলোকের কোলাহলের ন্যায় বীচিরব উত্থিত হইল। নাবিকেরা নৌ সকল তীরলগ্ন করিয়া রাত্রের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা করিতে লাগিল। তন্মধ্যে একখানি ছােট ডিঙ্গী অন্য নৌকা হইতে পৃথক্‌ এক খালের মুখে লাগিল। নাবিকেরা আহারাদির ব্যবস্থা করিতে লাগিল।

 ক্ষুদ্র তরণীতে দুইটীমাত্র আরােহী। দুইটাই স্ত্রীলােক। পাঠককে বলিতে হইবে না যে ইহারা মৃণালিনী আর গিরিজায়া।