পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৩

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।


পশুপতি।

 বঙ্গদেশে ধর্ম্মাধিকার পশুপতি অতি অসাধারণ ব্যক্তি তিনি দ্বিতীয় বঙ্গেশ্বর। রাজা বৃদ্ধ, বার্দ্ধক্যের ধর্ম্মানুসারে পরমতাবলম্বী এবং রাজকার্য্যে অযত্নবান্ হইয়াছিলেন, সুতরাং প্রধানামাত্য ধর্ম্মাধিকারের হস্তেই বঙ্গরাজ্যের প্রকৃত ভার অর্পিত হইয়াছিল। এবং সম্পদে অথবা ঐশ্বর্য্যে পশুপতি বঙ্গেশ্বরের সমকক্ষ ব্যক্তি হইয়া উঠিয়াছিলেন।

 পশুপতির বয়ঃক্রম পঞ্চত্রিংশৎ বৎসর হইবে। তিনি দেখিতে অতি সুপুরুষ। তাঁহার শরীর দীর্ঘ, বক্ষ বিশাল; সর্বাঙ্গ অস্থিমাংসের উপযুক্ত সংযোগে সুঠাম। তাঁহার বর্ণ তপ্তকাঞ্চনসন্নিভ; ললাট অতি বিস্তৃত, মানসিক শক্তির মন্দির স্বরূপ। নাসিকা দীর্ঘ এবং উন্নত, চক্ষু ক্ষুদ্র কিন্তু অসাধারণ ঔজ্জ্বল্য-সম্পন্ন। মুখকান্তি জ্ঞান-গাম্ভীর্য্য-ব্যঞ্জক এবং অনুদিন বিষয়ানুষ্ঠানজনিত চিন্তার গুণে কিছু পরুষভাবপ্রকাশক। তাহা হইলে কি হয়, রাজসভাতলে তাঁহার ন্যায় সর্বাঙ্গসুন্দর পুরুষ আর কেহই ছিল না। লোকে বলিত, বঙ্গদেশে তাদৃশ পণ্ডিত এবং বিচক্ষণ ব্যক্তিও কেহ ছিল না।

 পশুপতি জাতিতে ব্রাহ্মণ কিন্তু তাঁহার জন্মভূমি কোথা তাহা কেহ বিশেষ জ্ঞাত ছিল না। কথিত ছিল যে তাঁহার পিতা শাস্ত্রব্যবসায়ী দরিদ্র ব্রাহ্মণ ছিলেন।

 পশুপতি কেবল আপন বুদ্ধিবিদ্যার প্রভাবে গৌড় রাজ্যের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত হইয়াছিলেন।