পাতা:মেজদিদি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিয়া আনে, দুপুরবেলা নবীন ভাত খাইতে আসিলে দোকান আগলায়। দিন-দুই পরে একদিন তিনি আহার-নিদ্রা সমাপ্ত করিয়া ফিরিয়া গেলে সে ভাত খাইতে আসিয়াছিল। তখন বেলা তিনটা। কেষ্ট পুকুর হইতে স্নান করিয়া আসিয়া দেখিল, দিদি ঘুমাইতেছেন। তাহার তখনকার ক্ষুধার তাড়নায় বোধ করি বাঘের মুখ হইতেও খাবার কাড়িয়া আনিতে পারিত, কিন্তু দিদিকে ডাকিয়া তুলিবে, এ সাহস হইল না।

 রান্নাঘরের দাওয়ার একধারে চুপটি করিয়া দিদির ঘুমভাঙার আশায় বসিয়াছিল, হঠাৎ ডাক শুনিল, কেষ্ট?

 সে আহ্বান কি স্নিগ্ধ হইয়াই তাহার কানে বাজিল। মুখ তুলিয়া দেখিল, মেজদি তাঁহার দোতলার ঘরের জানালা ধরিয়া দাঁড়াইয়া আছেন। কেষ্ট একটিবার চাহিয়াই মুখ নামাইল। খানিক পরে হেমাঙ্গিনী নামিয়া আসিয়া, সুমুখে দাঁড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ক’দিন দেখিনি ত? এখানে চুপ ও রিয়া বসে কেন কেষ্ট?

 একে ত ক্ষুধায় অল্পেই চোখে জল আসে, তাহাতে এমন স্নেহার্দ্র কণ্ঠস্বর। তাহার দু’চোখ টল্‌টল্‌ করিতে লাগিল। সে ঘাড় হেঁট করিয়া রহিল, উত্তর দিতে পারিল না।

 মেজখুড়ীমাকে সব ছেলেমেয়েরা ভালবাসিত। তাঁহার গলার স্বর শুনিয়া কাদম্বিনীর ছোটমেয়ে ঘর হইতে বাহিরে আসিয়াই চেঁচাইয়া বলিল, কেষ্টমামা, রান্নাঘরে তোমার ভাত ঢাকা আছে, খাও গে, মা খেয়ে-দোয়ে ঘুমোচ্ছে।

 হেমাঙ্গিনী অবাক হইয়া কহিলেন, কেষ্টর এখনও খাওয়া হয়নি, তোর মা খেয়ে ঘুমোচ্চে কি রে-হাঁ কেষ্ট আজ এত বেলা হল কেন?

 কেষ্ট ঘাড় হেঁট করিয়াই রহিল। টুনি তাহার হইয়া জবাব দিল, কেষ্টমামার রোজ ত এমনি বেলাই হয়। বাবা খেয়ে-দোয়ে দোকানে ফিরে গেলে তবে তা ও খেতে আসে।

 হেমাঙ্গিনী বুঝিলেন তাহাকে দোকানের কাজে লাগান হইয়াছে। তাহাকে বসাইয়া খাওয়ান হইবে, এ আসা অবশ্য তিনি করেন নাই

১২