পাতা:মেজদিদি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

॥এক॥

  কেষ্টর মা মুড়ি-কড়াই ভাজিয়া, চাহিয়া-চিন্তিয়া, অনেক দুঃখে কেষ্টধনকে চৌদ্দ বছরেরটি করিয়া মারা গেলে, গ্রামে তাহার আর দাঁড়াইবার স্থান রহিল না। বৈমাত্রিয় বড় বোন কাদম্বিনীর অবস্থা ভাল। সবাই কহিল, যা কেষ্ট, তোর দিদির বাড়িতে গিয়ে থাক্‌ গে। সে বড়মানুষ, বেশ থাকবি যা।

 মায়ের দুঃখে কেষ্ট কাঁদিয়া-কাটিয়া জ্বর করিয়া ফেলিল। শেষে ভাল হইয়া ভিক্ষা করিয়া শ্রাদ্ধ করিল। তার পরে ন্যাড়া মাথায় একটি ছোট পুঁটলি সম্বল করিয়া দিদির বাড়ি রাজহাটে আসিয়া উপস্থিত হইল। দিদি তাহাকে চিনিত না। পরিচয় পাইয়া এবং আগমনের হেতু শুনিয়া একেবারে অগ্নিমূর্ত্তি হইয়া উঠিল। সে নিজের নিয়মে ছেলেপুলে লইয়া ঘরসংসার পাতিয়া বসিয়াছিল-অকস্মাৎ এ কি উৎপাত।

 পাড়ার যে বুড়োমানুষটি কেষ্টকে পথ চিনাইয়া সঙ্গে আসিয়াছিল তাহাকে কাদম্বিনী খুব কড়া-কড়া দু-চার কথা শুনাইয়া দিয়া কহিল, ভারী আমার মাসীমার কুটিমকে ডেকে এনেছেন, ভাত মারতে। সৎমাকে উদ্দেশ করিয়া বলিল, বজ্জাত মাগী জ্যান্তে একদিন খোঁজ নিলে না, এখন মরে গিয়ে ছেলে পাঠিয়ে তত্ব করেচেন। যাও বাপু, তুমি পরের ছেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাও—এসব ঝঞ্ঝাট আমি পোয়াতে পারব না।

 বুড়ো জাতিতে নাপিত। কেষ্টর মাকে ভক্তি করিত, মা ঠাকরুণ বলিয়া ডাকিত। তাই এত কটুক্তিতেও হাল ছাড়িল না। কাকুতিমিনতি করিয়া বলিল, দিদি-ঠাকরুণ, লক্ষ্মীর ভাঁড়ার তোমার। কত দাস-দাসী, অতিথি-ফকির, কুকুর-বেড়াল এ-সংসারে পাত পেতে মানুষ হয়ে যাচ্ছে, এ-ছোড়া দু’মুঠো খেয়ে বাইরে পড়ে থাকলে তুমি জানতেও পারবে না। বড় শান্ত সুবোধ ছেলে দিদি-ঠাকরুণ! ভাই