সর্ব্বাঙ্গে বাতের বেদনা আইঞ্চল পাতিয়া।
ছয় মাস যায় কন্যার কান্দিয়া কান্দিয়া॥
ভাত নাই সে রান্ধে কন্যা খেলায় নাই সে মন।
এইরূপ হইয়াছিল কন্যা সংশয় জীবন॥
আজি কেনে অকস্মাতে হইল এমন ধারা।
ছয় মাইস্যা মরা যেন উঠ্যা হইল খারা॥”[১]
দেল ভরিয়া কন্যা করিল রন্ধন।
জাতি দিয়া নদীয়ার ঠাকুর করিল ভোঞ্জন॥[২]
হোম্রা বাইদ্যা ডাক দিয়া বলে মাইন্কা ওরে ভাই।
“ভিন্ দেশী অতিথে আজ করিব পরখাই[৩]॥”
“আমার কাছে থাক ঠাকুর সুখে কর বাস।
দেশে দেশে ঘুইরা ফিরবা লইয়া দড়ি বাঁশ॥
যত্ন কইরা শিইখ খেলা থাক্যো মোদের পাশে।
বার মাস ঘুইরা[৪] আমরা ফিরি দেশে দেশে॥”১—২০
(১৫)
নদের চাঁদের প্রাণবিনাশার্থ হোম্রা কর্ত্তৃক মহুয়াকে ছুরিকা-প্রদান
অন্ধকাইরা রাইতের নিশি আরে ভালা আসমানে জ্বলে তারা।
ভাবিয়া চিইন্ত্যা হোম্রা বাইদ্যা উইঠ্যা হইল খারা॥
নদীর পারে হিজল গাছ পাতার বিছানা।
নদীয়ার ঠাকুর শুইয়া আছে হইয়া মইতানা[৫]॥
- ↑ ভাবিয়া—খারা = ভাবিতে ভাবিতে মহুয়ার রং কাল হইয়া গিয়াছে। বেদের দলের লোকেরা বলাবলি করিতেছে, ‘মহুয়ার কি ভয়ানক শিরঃপীড়া হইয়াছে যে, সে রাত্রে ঘুমায় না। অন্নজল সে ত্যাগ করিয়াছে। তাহার সর্ব্বাঙ্গে এমনই ব্যথা হইয়াছিল যে, গত ছয় মাস সে একরূপ আঁচল (আইঞ্চল) পাতিয়া শুইয়া থাকিত। সে আর নিজে ভাত রান্না করিত না—বেদেদের খেলায়, তাহার আর আগ্রহ দেখা যাইত না। আজ কেন অকস্মাৎ এমন হইল, যে ব্যক্তি ছয় মাস কাল মৃতবৎ পড়িয়াছিল সে হঠাৎ উঠিয়া দাঁড়াইল?’
[এতদ্দ্বারা অতিথির (নদের চাঁদের) আগমনজনিত মহুয়ার আনন্দ সূচিত হইতেছ।] - ↑ ভোঞ্জন = ভোজন। জাতি—ভোঞ্জন = আজ নদের চাঁদ ব্রাহ্মণ হইয়া মহুয়ার রাঁধা ভাত খাইয়া জাতি নষ্ট করিলেন।
- ↑ পরখাই =পরীক্ষা।
- ↑ ঘুইরা =ঘুরিয়া।
- ↑ মইতানা = মত্ত হইয়া, বহু দিনান্তে মহুয়ার দর্শন পাইয়া আনন্দে মত্ত হইয়া ঘুমাইয়া আছে।