পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পত্র

দেশের তুলনায় এখানকার ঘরগুলো লম্বা চৌড়া ও উঁচুতে ঢের ছোটো। ছোটো ছোটো ঘরগুলো চার দিকে জানলা-বন্ধ, একটু বাতাস আসবার জো নেই, কেবল জানলাগুলো সমস্ত কাঁচের ব’লে আলো আসে। শীতের পক্ষে এ রকম ছোটোখাটো ঘরগুলো খুব ভালো, একটু আগুন জ্বাললেই সমস্ত বেশ গরম হয়ে ওঠে। কিন্তু তা হোক— যে দিন মনে করো মেঘে চারি দিক অন্ধকার হয়ে গেছে, টিপ্ টিপ্‌ করে বৃষ্টি পড়ছে, তিন-চার দিন ধরে মেঘ বৃষ্টি অন্ধকারের এক মুহূর্ত বিরাম নেই, সে দিন এই ছোট্ট অন্ধকার ঘরটার এক কোণে বসে আমার মনটা অত্যন্ত বিগড়ে যায়, কোনোমতে সময় কাটে না; এক, দুই, তিন ক’রে গুনে গুনে দেয়ালে মাথা ঠুকে ঠুকে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। খালি আমি ব’লে নয়, আমার ইংরেজ আলাপীরা বলেন সে রকম দিনে তাঁদের অত্যন্ত swear করার প্রবৃত্তি জন্মায়, (swear করা রোগটা সম্পূর্ণ য়ুরোপীয়, সুতরাং ওর বাঙ্গালা কোনো নাম নেই)— মনের ভাবটা অধার্মিক হয়ে ওঠে। ঘরগুলো যদি আরও একটু দরাজ হত তা হলেও মনের এ রকম খুঁৎখুঁতে ভাব অনেকটা দূর হত। ছোটো হোক, ঘরগুলো যথেষ্ট সাজানো; ছবি টেবিল চৌকি কৌচ ফুলদানি পিয়ানো ইত্যাদি গৃহসজ্জা। প্রায় প্রতি ঘরে এক-একটা বড়ো বড়ো আয়না আছে, খেতে শুতে বসতে নিজের মুখ দেখতে পাওয়া যায় —সুশ্রী মানুষের পক্ষে এ রকম মন্দ নয়, কিন্তু প্রতি পদে এই কালো মূর্তি দেখলে আয়নাগুলো ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করে। যত মনে করি সাহেব হয়েছি, ‘নেটিব’ত্ব যতই ভুলে যেতে চেষ্টা করি, ততই যে ঘরে যাই চার দিক থেকে আয়নাগুলো আমাদের কালো মুখ প্রকাশ করে যেন ভেংচাতে থাকে— এক এক সময় জ্বালাতন হয়ে উঠতে হয়। এখানকার বাড়িগুলো আমাদের দেশের কোঠাবাড়ির মতো তেমন

৮৫