পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পত্র

রকম প্রতি পদে এদের শিল্পচর্চার উন্নতি হয়। প্রথম হয়তো এই রকম সুশ্রী অঙ্গচালনা প্রভৃতি অভ্যাসসাধ্য, কিন্তু ক্রমে সেটা স্বাভাবিক হয়ে যায় ও বংশাবলীক্রমে সংক্রামিত হতে থাকে। এ রকম শিল্পচর্চার ভাব খুব ভালো তার আর সন্দেহ নেই, কিন্তু একটা স্বতন্ত্র পরিষ্কারের ভাব থাকাও আবশ্যক। এখানকার লোকেরা খাবার পরে আঁচায় না; কেননা, আঁচানো-জল মুখ থেকে পড়ছে, সে অতি কুশ্রী দেখায়। শ্রীহানি হয় বলে পরিষ্কার হওয়া হয় না। এখানে যে রকম কাশি সর্দির প্রাদুর্ভাব তাতে ঘরে একটা পিকদানি নিতান্ত আবশ্যক, কিন্তু সে অতি কুশ্রী পদার্থ বলে ঘরে রাখা হয় না— রুমালে সমস্ত কাজ চলে। আমাদের দেশের যে রকম পরিষ্কার-ভাব তাতে আমরা বরঞ্চ ঘরে একটা পিকদানি রাখতে পারি, কিন্তু জামার পকেটে এ রকম একটা বীভৎস পদার্থ রাখতে ঘৃণা হয়। কিন্তু এখানে চোখেরই আধিপত্য। রুমাল কেউ দেখতে পাবে না, তা হলেই হল। চুলটি বেশ পরিষ্কার করে আঁচড়ানো থাকবে, মুখটি ও হাত দুটি বেশ সাফ থাকবে, তা হলেই লোকে সন্তুষ্ট থাকে— স্নান করবার বিশেষ আবশ্যক নেই। এখানে জামার উপরে অন্যান্য অনেক কাপড় পরে ব’লে জামার সমস্তটা দেখা যায় না, খালি বুকের ও হাতের কাছে একটু বেরিয়ে থাকে। এক রকম জামা আছে, তার যতটুকু বেরিয়ে থাকে ততটুকু জোড়া দেওয়া, সেটুকু খুলে ধোবার বাড়ি দেওয়া যায়। তাতে সুবিধা হচ্ছে যে, ময়লা হয়ে গেলে জামা বদলাবার কোনো আবশ্যক করে না, সেই জোড়া টুকরোগুলো বদলালেই হল। এখানকার দাসীদের কোমরে এক apron বাঁধা থাকে, সেইটি দিয়ে তাঁরা না পৌঁছেন এমন পদার্থ নেই। খাবার কাঁচের প্লেট যে দেখছ ঋক্ ঋক্ করছে সেটিও সেই সর্বপারক apronটি দিয়ে মোছা

৮৭