পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

নে, এমন-কি বিশ্বাস করতে পারি নে। এখেনে যতগুলি ভারতবর্ষীয় এয়েছেন, সর্ব প্রথমেই তাদের চোখে কী ঠেকেছে?— এখানকার সমাজের সুখ ও উন্নতি -সাধনে মহিলাদের নিতান্ত-প্রয়োজনীয় সহায়তা। যাঁরা স্ত্রীস্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন, এখেনে এসে নিশ্চয়ই তাঁদের মতের সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে।’

 এখানকার নিমন্ত্রণসভা শিক্ষার যে কত সাহায্য করে তার ঠিক নেই। মুখে মুখে কথাবার্তায় মেয়ে-পুরুষদের মধ্যে জ্ঞান ছড়িয়ে যায়। বিনা কষ্টে ও অলক্ষিত ভাবে মনের একটা শিক্ষা হতে থাকে। একটা বিষয়ে নানা লোকের মত শুনতে পাওয়া যায়; কিরকম করে মত গঠিত করতে হয়, কিরকম করে মত ব্যক্ত করতে হয় ও কিরকম করে মতের প্রতিবাদ করতে হয়, সে বিষয় প্রতি মুহূর্তে অভ্যাস হতে থাকে। সমাজে মিশতে গেলে নানা বিরোধী মতের একটা সংঘাত উপস্থিত হয়, সুতরাং একটা বিষয়ের চার দিক দেখতে পাওয়া যায়। যদি দৈবাৎ বিবেচনা না করে একটা মত স্থির করো অমনি সে মত চারি দিক থেকে হুঁচট খেতে থাকে, সুতরাং তোমাকে অনেকটা সাবধান হতে হয়। সাহিত্য বিজ্ঞান রাজনীতি -সম্বন্ধীয় খবর দেখতে দেখতে মুখে মুখে সমস্ত দেশময় রাষ্ট্র হয়ে যায়। একটা নতুন বই যদি ভালো হয়ে থাকে, তবে মুখে মুখে তার বিজ্ঞাপন প্রচার হয় ও দেশের মেয়ে-পুরুষ সকলেই সে বইয়ের অস্তিত্ব জানতে পারে। এই রকম করে চার দিকের বাতাসে যেন জ্ঞান ছড়িয়ে যায়, নিশ্বেসের সঙ্গে যেন জ্ঞান লাভ করা যায়। এখানকার নিমন্ত্রণসভা গুণীদের উৎসাহ দেবার প্রধান স্থান। সভায় তাদের সম্মানের আর সীমা নেই। ষাঁদের সংগতি ও যোগ্যতা আছে তাঁরা সকলেই গুণীদের নিমন্ত্রণ করতে চান। এখানকার নিমন্ত্রণসভার তাঁরা 'lion'—— সিংহ।

১০০