পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

হইলেই যদি স্ত্রীদিগের আর কোনো গুণের প্রয়োজন না হইত তাহা হইলে আমরা লেখকের মতে সম্পূর্ণ মত দিতে পারিতাম। কিন্তু তাহা তো নহে— যেমন স্বাধীনতা চাই তাহার সঙ্গে তেমনি শোভন লজ্জাশীলতা, বিনয়, সরলতা, উচ্চের প্রতি ভক্তিমত্তা, নীচের প্রতি দয়া দাক্ষিণ্য ইত্যাদি অনেকগুলি গুণ থাকা চাই তবেই তাঁহারা স্ত্রীলোকের আদর্শ-রূপে বরণীয় হইতে পারেন। নচেৎ স্ত্রীস্বাধীনতার আর-এক নাম স্বৈরচারিতা, ব্যাপিকতা, প্রগল্ভতা হইয়া দাঁড়ায়। প্রকৃত কথা এই যে, আমাদের দেশে এক্ষণে রাজনৈতিক স্বাধীনতা, শিক্ষাবিষয়ক স্বাধীনতা, রুচিবিষয়ক স্বাধীনতা ইত্যাদি অনেক স্বাধীনতার অপ্রতুল রহিয়াছে। তাহার সঙ্গে কী-মাত্রা স্ত্রীস্বাধীনতা ভালোয় ভালোয় ঢেঁকিয়া থাকিতে পারে তাহাই এখন বিবেচনাস্থলে। ইংলন্‌ডের আর-আর স্বাধীনতার সঙ্গে ইংলন্‌ডোচিত স্ত্রীস্বাধীনতা ইংলন্‌ডেই শোভা পায়; তেমনি যদি আমাদের দেশোচিত স্ত্রীস্বাধীনতা নৈসর্গিক শোভায় সমুখিত হয় তবেই ভালো। নইলে— মাথাটা খুব প্রকাণ্ড, ধড়খানি ছোটোখাটো— অথবা মাথায় হ্যাট, গায়ে জামা, পায়ে চটি—এইরূপ এক কিম্ভূতকিমাকার স্বাধীনতা সকলের সহিত খাপছাড়া হইয়া দিনকতক মিথ্যা দাপাদাপি করিয়া বেড়াইলে তাহাতে কাহার যে কী উপকার হইবে তাহা তো বুঝা যায় না। ‘উঃ ইনি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করিয়াছেন’— এরূপ যদি কেউ মনে করেন তবে তাঁহাদের জানা উচিত যে, এ স্বাধীনতা আত্মার স্বাধীনতাও নহে, দেশের স্বাধীনতাও নহে, কেবল পরপুরুষগণের সহিত স্ত্রীলোকগণের আমোদ-প্রমোদে মেলা-মেশ—ইহা কতদূর প্রকৃতরূপে স্বাধীনতা নামের যোগ্য তাহাই সন্দেহস্থল। স্ত্রীরা যেমন গৃহকর্মের উপযুক্ত, পুরুষেরা সেইরূপ বহির্ব্যাপারে ব্যাপৃত থাকিবার উপযুক্ত। স্ত্রীগণের মধ্যে যাঁহারা কাজের লোক তাঁহারা অধিকাংশ কাল গৃহাভ্যন্তরে থাকিতে বাধ্য হন, এবং পুরুষদিগের মধ্যে যাঁহারা কাজের লোক তাঁহারা অধিকাংশ কাল বাহিরে বিচরণ করিতে বাধ্য হন। অন্তঃপুরে থাকা স্ত্রীজনের পক্ষে সুবিধা বলিয়াই স্ত্রীলোকের অন্তঃপুরবাসের প্রথা প্রচলিত হইয়াছে; পুরুষেরা স্বার্থপর বলিয়া ওরূপ প্রথা প্রচলিত হইয়াছে এ কথা কোনো কার্যের

১০৮