পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

পারলুন না;[১] দ্বিতীয়তঃ, রাজনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে স্ত্রীস্বাধীনতার কোন‍্খনটা যোগ আছে তাই আমি ভালো করে দেখতে পেলেম না। আমাদের দেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই বললে এই বোঝায় যে, আমরা ইংরেজদের অধীনে বাস করছি;[২] যদি এমন হত যে, স্ত্রীলোকেরা অত্যন্ত বলিষ্ঠ জাতি, তাদের অন্তঃপুর থেকে মুক্ত করে দিলে ইংরাজদের রাজত্ব লোপ হবার সম্ভাবনা, তা হলে বুঝতাম যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই বলে আমাদের দেশে স্ত্রীস্বাধীনতার ঘোরতর ব্যাঘাত বর্তমান। একটা স্বাধীনতা নেই বলে পৃথিবীতে যদি আর কোনো রকম স্বাধীনতা না থাকে, তা হলে আমাদের দেশে পুরুষদের স্বাধীনতা আছে কী করে? আমাদের দেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই, অতএব পুরুষরা অন্তঃপুরে প্রবেশ করে না কেন?[৩] রাজনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে স্ত্রীস্বাধীনতার যদি কোনো যোগ থাকে, তবে পুরুষস্বাধীনতার সঙ্গেও তার সেই পরিমাণে যোগ আছে সন্দেহ নাই। দেশীয় রাজার অধীনে থাকলে স্ত্রীস্বাধীনতা বিষয়ে আমাদের এখনকার চেয়ে কী সুবিধা হত ও কোন্ সুবিধা হত সেইটে বললেই আমি চুপ করব।[৪] লেখক-মহাশয় হয়তো বলবেন, এখনো আমাদের দেশে স্ত্রীস্বাধীনতার সময় আসে নি, সময় এলে স্বাধীনতা আপনা-আপনিই আসত। হঠাৎ যদি আজই সমস্ত স্ত্রীলোকেরা স্বাধীন হয়, তা হলে তার থেকে খারাপ ফল হতে পারে। খুব সম্ভব আমাদের দেশে আজও স্ত্রীলোকদের স্বাধীন হবার সময় হয় নি, কিন্তু আমি তো আর তলবার হাতে করে স্ত্রীস্বাধীনতা প্রচার করছি নে; কিম্বা আমি তো আজই ভারতবর্ষের Governor General হয়ে আইন বের করছি নে যে, যারা স্ত্রী-কন্যাদের স্বাধীনতা না দেয়, তাদের ফাঁসি

১১২
  1.  
  2.  
  3.  
  4.