পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পত্র

দেওয়া হবে। আমি একটা কাগজে স্ত্রীস্বাধীনতা প্রার্থনীয় কি না সে বিষয়ে আমার মত প্রকাশ করেছি; আমার আশাও ছিল না উদ্দেশ্যও ছিল না যে, আমার প্রবন্ধটি পড়বামাত্র অমনি ভারতবর্ষের বিংশতি কোটি লোক তৎক্ষণাৎ তাদের স্ত্রী কন্যা ভগ্নীদের অন্তঃপুর থেকে মুক্ত করে তাঁদের অসূর্যম্পশ্যরূপত্বের গর্ব থেকে বঞ্চিত করবে। আমি বিলক্ষণ জানতেম, সূর্যের এত সৌভাগ্য আজও হয় নি যে, এত সহজে তার যুগযুগান্তরের আশা পূর্ণ হবে। আমার অভিপ্রায় এই ছিল যে, যদি বা স্ত্রীস্বাধীনতার সময় আমাদের দেশে এখনও না এসে থাকে তবে সেই সময় যত শীঘ্র আসে আমাদের তার চেষ্টা করা উচিত।[১] প্রথমে আন্দোলন, তার পরে কাজ, তার পরে সিদ্ধি। সময় আসে নি বলে যদি মুখ বন্ধ করে বসে থাকতে হয় তা হলে সময় কোনো কালে আসে না। পৃথিবীতে কোন্ দেশে এমন কোন্ বৃহৎ সমাজসংস্কার হয়েছে যা আন্দোলন না করেই হয়েছে? অত কথায় কাজ কী? আমাদের বাংলাদেশে অতি অল্প দিন পূর্বে যে ধর্মসংস্কারের আরম্ভ হয় ও আজ পর্যন্ত যার আন্দোলন চলছে সেই বিষয়ে উদাহরণ দিলেই আমার যুক্তি অতি সহজে বোধগম্য হবে।[২] ভারতবাসীদের মন এখনও অজ্ঞতাকুসংস্কারাচ্ছন্ন আছে, নিরাকার ঈশ্বরের ভাব তারা বুঝতে পারবে না, সুতরাং এখনও সত্যধর্মপ্রতিষ্ঠার সময় হয় নি বলে যদি রামমোহন রায় নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকতেন, যদি তখনকার বৃদ্ধ পৌত্তলিক সমাজের সঙ্গে ঘোরতর সংগ্রাম না করতেন—সময়ের অভাব— সময়ের শূন্য ভিক্ষার ঝুলি পূর্ণ করবার চেষ্টা না করে তিনি যদি ভিক্ষুক ভাবে, অঞ্জলি পেতে সময়ের মুখপ্রতীক্ষা করে বসে থাকতেন, তা হলে আজকের এই ব্যাপ্যমান ব্রাহ্মধর্ম কোথায় থাকত?[৩] আমাদের দেশে স্ত্রীস্বাধীনতার অভাব লোকে এখনও

১১৩
  1.  
  2.  
  3.