পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

ভালো করে অনুভব করতে পারে নি, কিন্তু তাই বলে কি চুপ করে বসে থাকতে হবে? ব্যক্তিবিশেষের যদি অস্বাভাবিক কারণে ক্ষিদে আদবে না থাকে তা হলে তাকে খেতে দিয়ো না, কেননা, সে হজম করতে পারবে না; কিন্তু তৎক্ষণাৎ তাকে কবিরাজ দেখানো কর্তব্য, যাতে তার ক্ষিদে হয় এমন বটিকা সেবন করানো আবশ্যক। আমি তাই ভেবে-চিন্তে ভারতীতে সমাজের জন্যে এক রতি বটিকার ব্যবস্থা করেছিলুম; কিন্তু রোগ এমন বদ্ধমূল ও কবিরাজের সাধ্যমত বটিকার মাত্রা এমন যৎসামান্য যে, তাতে উপকার হবার সম্ভাবনা অতি অল্প। কিন্তু আমাদের দেশের সকল কবিরাজ মিলে যদি এই রকম বটিকা সেবন আরম্ভ করান তা হলে অচিরাৎ রোগীর ক্ষুধার সঞ্চার হবে। লেখক-মহাশয় বলেন—‘ ‘উঃ ইনি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করেছেন’ এরূপ কেউ যদি মনে করেন, তবে তাঁহাদের জানা উচিত যে, এ স্বাধীনতা দেশেরও স্বাধীনতা নহে, আত্মারও স্বাধীনতা নহে, কেবল পরপুরুষগণের সহিত স্ত্রীলোকগণের আমোদপ্রমোদে মেলামেশা!’ কথাগুলো এমন করে বসানো হয়েছে যে, শুনলে অনেক পাঠকের গা শিউরে উঠবে। ‘পরপুরুষ’! ‘আমোদপ্রমোদ’!! ‘মেলামেশা’!!! কী সর্বনাশ! আমাদের ভাষায় ‘পরপুরুষ’ কথাটার সঙ্গে একটা দারুণ বিভীষিকা লিপ্ত আছে, লেখক-মহাশয় সেই সুবিধা পেয়ে কথাটা ব্যবহার করেছেন। কিন্তু আমি জানতে চাই, গরিব ‘পরপুরুষ’ কথাটি কী অপরাধ করেছে, যে, সে বেচারির ওপরে এত নিগ্রহ! পর বলেই কি তার এত দোষ?[১] কিন্তু আমাদের শাস্ত্রে বলে মহাত্মা লোকদের ‘বসুধৈব কুটুম্বকং’। ‘আমোদ-প্রমোদ’ ও ‘মেলা-মেশা’ কথ। দুটো এমন ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যে তার মধ্যে থেকে একটা ঘোরতর রহস্যপূর্ণ অর্থ প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু আমি আশা করি,

১১৪
  1.