পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

করিয়া বেড়ায় না, সে কেবল পতির শাসনভয়ে নহে, পতির প্রতি ভালোবাসাই তাহার কারণ।’ ও হরি! আমি কি বলেছি যে কুলরমণীরা ‘যে-সে’ পুরুষের সঙ্গে কেবল ‘আমোদই’ করে বেড়াবে? রেখাগুলিকে ঈষৎ বেঁকিয়ে-চুরিয়ে বাড়িয়ে-কমিয়ে একটি সুশ্রী ছবিকেও কদর্য করা যায়, শিবকেও বাঁদর গড়ে তোলা যায়। কোনে। পাঠক-মহাশয় কি আমার লেখা থেকে মনে করেছেন যে আমাদের কুলরমণীরা পথে ঘাটে যাকে তাকে দেখবে তারই সঙ্গে আমোদ করে বেড়াবে?[১] অত কথায় কাজ কী, কোন্ দেশের পুরুষেরাই ‘যে-সে’ পুরুষের সঙ্গে ‘আমোদ’ করে বেড়ায়? আমরা তো অনেক লোকের সঙ্গে মিলে থাকি, আমরা কি কেবলমাত্র আমোদ করবার জন্যেই মিলি? আমরা কাজ-কর্মের জন্যে মিলি, ভদ্রতার খাতিরে মিলি, বন্ধুভাবে মিলি, সাহায্য করতে মিলি, সাহায্য গ্রহণ করতে মিলি এবং মেলবার আরও অসংখ্য উপলক্ষ আছে। পৃথিবীতে শত সহস্র মানুষ আছে ও মানুষ সামাজিক জীব, সুতরাং মানুষে মানুষে পরস্পর দেখাসাক্ষাৎ হওয়াই স্বাভাবিক। নিতান্ত চোকে ঠুলি দিয়ে না বেড়ালে বা অন্তঃপুরের সিন্ধুকে চাবিবন্ধ না থাকলে এ রকম দেখাসাক্ষাৎ নিবারণের আর তো কোনো উপায় নেই। তা ছাড়া অন্য লোকের সঙ্গে মেশা কি স্বামীর প্রতি অপ্রীতির চিহ্ন? আমি তো তার একটা অর্থ খুঁজে পাই নে।[২] তোমার একটি নিতান্ত অন্তরঙ্গ প্রাণের বন্ধু আছে, কিন্তু তাই বলে কি তুমি ঘোমটা টেনে বসে থাকবে,[৩] ও পরপুরুষের (অর্থাৎ বন্ধু ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের) মুখ দেখবে না বা তাদের সঙ্গে কথা কবে না?[৪] তাদের মুখ দেখলে বা তাদের সঙ্গে কথা কইলে কি তোমার বন্ধুর ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়া হল না? এমন বন্ধুর সঙ্গে আমি তো কোনো কারবার রাখি নে।[৫]

১১৬
  1.  
  2.  
  3.  
  4.  
  5.