পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পত্র

যা হোক— ‘এই-সকল যৎপরোনাস্তি দুরূহ বিষয়ের তত্ত্ব’ এই বাঙালিকে শিক্ষা দেবার জন্যে লেখক-মহাশয় একটা নূতন বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করবার পরিশ্রম স্বীকার না করে যদি তাঁর অবসরমত এই ভারতীতে এ বিষয়ে মাঝে মাঝে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন, তা হলে এই য়ুরোপ-প্রবাসী বঙ্গযুবক গুরুদক্ষিণা-স্বরূপ তাঁর নোটানলের ইন্ধনযোগ্য আরও কতকগুলো সৃষ্টিছাড়া সমাজসংস্কারক মত পাঠিয়ে দেবে।



১১৭

    যথার্থ যদি এরূপ হইয়া থাকে তবে সে কথাগুলা লেখকের উচিত ছিল উদ্ধৃত করিয়া দেওয়া। ভা. স.

    কেন যে আবশ্যক ছিল না তাহা আমরা বুঝিতে পারিলাম না। লেখক আমাদের নিরীহ দেশটির প্রতি স্বচ্ছন্দে ধিক্কারের খরশাণ কৃপাণ এবং উপহাসের তীক্ষ্ণ বাণ অনর্গল চালাইতে পারেন, আর-এক ব্যক্তি ঢাল দিয়া তাহা আটকাইতে গেলে সে তাহা পারিবে না— কেননা লেখকের মতে তাহা অনাবশ্যক। এমন-কি হইতে নাই যে, লেখক এক পক্ষে বেশি ঝোঁক দেওয়াতে তাঁহার চক্ষে তিনিই দেখিতেছেন যে, তাঁহার বিরোধী পক্ষের কথাগুলি উত্থাপনেরই যোগ্য নহে? ভা.স.

    লেখক কী ভাবে কী কথা বলিতেছেন তাহার প্রতি তত আমাদের লক্ষ নহে যত— পাঠকেরা তাঁহার কথা কী ভাবে গ্রহণ করিবেন, তাহার প্রতি। আজিকার কালের কৃতবিদ্য ব্যক্তি মাত্রেরই লক্ষ দেশীয় কুসংস্কারের উপর— যিনি একটু কলম ধরিতে জানেন তিনি সর্বাগ্রে তাহার উপরেই আপনার গোলোন্দাজির পরীক্ষা করিতে যান, কিন্তু তাহার বন্দুকের গুলিগুনো লাগে কোথায়? না, দেশীয় রীতি নীতি প্রথা যত-কিছু আছে সকলেরই গাত্রে— তা সে সু-ই হউক আর কু-ই হউক তার আর বাকৃবিচার নাই। আমাদের দেশের ভালো রীতি ভালো প্রথা ইংরাজি রীতি-নীতি-প্রথার সহিত না মিলিলেই আজকের কালের কৃতবিদ্য লোকেরা সমস্তগুলিকেই কুসংস্কারের