পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র


১১৮

    কোটায় ফেলিয়া দেন—সেইগুলিকে বাঁচানোই আমাদের লক্ষ্য। পাছে লোকের মনে এই একটি কুসংস্কার জন্মে যে, বিবিদিগের চাল-চোল ধরণধারণের নামই স্ত্রীস্বাধীনতা, আর আমাদের কুলস্ত্রীদিগের চাল-চোল ধরণধারণের নামই হাতে হাতকড়ি, পায়ে বেড়ি, অধুনা কেবল তাহারই প্রতিবাদ করা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। ভা. স.

    অবশ্য কোনো অভিধানে স্ত্রীস্বাধীনতার ওরূপ অর্থ পাওয়া যায় না, কিন্তু কাজে কী দেখা যায়? লেখক যদি বিলাতি বিবিদিগকে আদর্শ না করিয়া বিশুদ্ধরূপে স্ত্রীস্বাধীনতা-বিষয়ক একটি প্রবন্ধ লিখিতেন, তাহ! হইলে স্ত্রীস্বাধীনতার অতগুলি পার্ষ্ণিরক্ষক (body-guard) আবশ্যক হইত না; কিন্তু লেখক বিলাতি বিবিদিগের চাল-চোল ধরণ-ধারণের আনুষঙ্গিক রূপে স্ত্রীস্বাধীনতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়াছেন, এজন্য বিলাতানভিজ্ঞ অধিকাংশ লোকের মনে সহসা এইরূপ একটা কুসংস্কার জন্মিতে পারে যে কার্যতঃ স্ত্রীস্বাধীনতা আর-কিছুই নহে— কেবল বিবিদিগের চাল-চোল ধরণ-ধারণ ইত্যাদি। ইহা একটি লোকবিখ্যাত বিষয় যে, বিবিদিগের shoppingএর জ্বালায়, নির্দোষ (?) আমোদাসক্তির জ্বালায়, তাহাদের স্বামীরা ধনে প্রাণে মারা যায়; অথচ স্ত্রীস্বাধীনতার একটু কোথাও পাছে আঁচড় লাগে এই ভয়ে তাঁহারা সকল অত্যাচার ঘাড় পাতিয়া লন, সকল বিষ হজম করিয়া ফেলেন। ইউরোপ ভিন্ন আর কোথাও যে স্ত্রীস্বাধীনতা নাই এমন নহে— জাপানে আছে, বোম্বাইয়ে আছে, কিন্তু সে-সকল নিয়ে আলোচনা করা লেখকের উদ্দেশ্য নহে, সর্বদেশসম্মত স্ত্রীস্বাধীনতার বিশুদ্ধ আদর্শ নিয়ে আলোচনা করাও লেখকের উদ্দেশ্য নহে, ইংলন্‌ডে যেরূপ স্ত্রীস্বাধীনতা প্রচলিত তাই যা কেবল লেখকের একমাত্র আলোচ্য বিষয়; এরূপ যখন—তখন ইংলন‍্ডের প্রচলিত স্ত্রীস্বাধীনতা যে কী ভয়ানক বস্তু, তাহা যে শত সহস্র স্থানে নামে স্বাধীনতা কাজে স্বৈরচারিতা— তাহা যে ঔদ্ধত্য, প্রগল্‌ভতা, গুরুজনের প্রতি অবজ্ঞা, দেহ-পীড়ন-বেশ-বাহুল্য এরূপ কত শত দোষে দূষিত, Saturday Review প্রভৃতি কাগজে যাহার চীৎকার কাঁদুনি মধ্যে মধ্যে ভুক্তভোগী জনের বুক ফাটিয়া বাহির হইয়া পড়িতে শুনা গিয়া থাকে, লেখক সে-সকল