পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র
১২০

    দুই দিকেই সংকট; যদি আমরা ইংরাজদিগকে জেতৃজাতীয় লোক মনে করিয়া তাহাদের নিকটে কুঁকড়িয়া-সুঁকড়িয়া থাকি তবে তাহারা আমাদের অতি অপদার্থ জ্ঞান করিবে ও আমাদের স্ত্রীগণকে আয়াদিগের হইতে এক ধাপ নয় উঁচু মনে করুক— কিন্তু ভদ্রঘরের স্ত্রীলোকদিগকে যেরূপ সম্মানচক্ষে দেখিতে হয় তাহা তাহারা কখনোই করিবে না; ক্রমাগতই শুনা যায় যে, বাঙালির স্ত্রীস্বাধীনতা রেল-গাড়িতে ইংরাজের পুরুষস্বাধীনতার হস্তে যার পর নাই অপমানিত হইয়া থাকে। এই এক দিক, আর-এক দিক এই যে, যদি আমরা ইংরাজদিগের সহিত সমকক্ষভাব ধারণ করিতে যাই তবে প্রথম-প্রথম হয়তো তাহারা মুখে একটু আপ্যায়িত করিবে এই পর্যন্ত, ভিতরে ভিতরে যে আমাদের স্পর্ধা-নিবারণের উপায় চিন্তা করিবে ইহাতে আর কিছুমাত্র ভুল নাই। ইংরাজেরা কত বাঙালিকে খুন করিয়া স্বচ্ছন্দে পার পাইয়া যাইতেছে আর একজন স্ত্রীলোকের প্রতি হস্তক্ষেপ করিতে ভয় পাইবে—ইহার কি কোনো অর্থ আছে? যদি পরিশেষে বাঙালি বিচারকর্তার হস্তে পড়িবার সম্ভাবনা থাকিত তবেই যা তাহাদের ভয়ের কারণ হইত— কিন্তু আমাদের দেশীয় বিচারালয়ের বিচার যেরূপ ইংরাজ-ঘেঁষা, তাহাতে আমাদের দেশের যেমন না কেন রাজরানী হউন-না, একজন সামান্য ইংরাজ তাঁহার যথেষ্ট অপমান করিলেও আদালতের সূক্ষ্ম বিচারে দাঁড়াইবে যে, বরং বাদিনীর দোষ, কেন সে প্রতিবাদীকে রাগাইয়া দিল—প্রতিবাদীর কোনো দোষ নাই। আবার, আমাদের দেশের এমন কতকগুলি ভাব আছে যাহা বিদেশীয় বিচারকের আমলেই আসিতে পারে না; আমাদের দেশীয় স্ত্রীলোকের গায়ে সামান্য একটু অপমানের আঁচ লাগিলে তাহা যে কত অধিক বলিয়া বোধ হয় তাহা বিদেশীয় সর্বসহনক্ষম কঠোর মনে এক মুহূর্তও স্থান পাইতে পারে না। আমাদের দেশীয় লোকেরা আমাদের দেশীয় স্ত্রীলোকদিগকে যেরূপ সম্মানচক্ষে দেখে ইংরেজেরা কখনোই সেরূপ দেখে না, ইহারও আবার প্রমাণ দিতে হইবে না কি? এই সেদিন একজন ইংরাজ বিচারকর্তা প্যায়দাকে দিয়া একজন দেশীয় স্ত্রীলোকের ঘোমটা খোলাইলেন— এ কী বলো দেখি! একজন বাঙালি বিচারকর্তা যদি ইউরোপীয় কোনো স্ত্রীলোকের