পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র




১২২

    গ্যালান্‌ট্রি, নহে, ইহা আর এক বস্তু— কী? না, পরস্ত্রীকে মাতৃবৎ পরিত্র ভাবে দেখা। স্ত্রীলোকদিগকে মাতৃসম্বোধনে সম্মান করিবার প্রথা আমাদের দেশের যেটি আছে তাহার সহিত এবং ইউরোপ-দেশীয় gallantryর সহিত তুলনা করিয়া দেখিলে দুয়ের মধ্যে স্বর্গ-নরক-প্রভেদ দেখিতে পাওয়া যায়। দেশীয় কুলরমণীর যে-একটি পবিত্র মর্যাদা তাহা কি gallantry-পরায়ণ ব্যক্তিরা জানে? না, তাহাদিগকে তাহা বলিয়া বুঝানো যাইতে পারে? কিন্তু গ্যালান্‌ট্রি যে কী বস্তু তাহা আমরা বিলক্ষণ বুঝি— তাহার বশবর্তী হইয়া একটি সুন্দরী মিস তাহার গুরুজনকে পশ্চাতে ফেলিয়া আপনি স্বচ্ছন্দে হই হই করিয়া প্রধান আসন গ্রহণ করেন— আমাদের দেশে এই-সকল চাল-চোল শিক্ষা হইলেই সর্বনাশ! ইংরাজেরা যখন জেতৃজাতি এবং তাহারা আমাদের দেশের স্ত্রীলোকদিগের কুলমর্যাদার কোনো তক্কাই রাখে না তখন আমাদের কী-এত দায় পড়িয়াছে যে তাহাদের সমক্ষে আমাদের স্ত্রীলোকদিগকে বাহির না করিলেই নয়! ভা. স.

    পুরুষের অপমানিত হওয়া এবং স্ত্রীলোকের অপমানিত হওয়া যদি একই কথা হইত তাহা হইলে লেখক ঠিকই বলিতেছেন যে, স্ত্রীজাতিকে যেরূপ সাবধানে রক্ষা করা হয় পুরুষজাতিকে সেরূপ রক্ষা করা হয় না কেন? কিন্তু বিলাতি গ্যালান্‌ট্রি-শাস্ত্রেওতো আছে যে স্ত্রীর গায়ে আঘাত লাগিলে যত লাগে পুরুষের গায়ে আঘাত লাগিলে উহার তুলনায় তাহা কিছুই নহে। ভা.স.

    আমাদের দেশে পূর্বকালে অতি এক নির্বিষ নিষ্কণ্টক স্ত্রীস্বাধীনতা প্রচলিত ছিল ইহা কাহারও অবিদিত নাই। বোম্বাই প্রদেশে এখনও তাহার কতকটা আভাস দেখিতে পাওয়া যায়; ইহাতেই যথেষ্ট প্রমাণ হইতেছে যে স্বদেশীয় স্ত্রীস্বাধীনতা স্বদেশীয় রাজ্যশাসনপ্রণালীর আয়ত্তাধীনেই সুন্দর শোভায় পরিস্ফুট হইতে পারে। যেমন মুসলমানদিগের বাহুবল তেমনি ইংরাজদিগের বাহুবলতিরস্করিণী মন্ত্রবিদ্যা সর্বাঙ্গসুন্দর দিশি স্ত্রীস্বাধীনতার বিরোধী। ভা. স.

    ‘যত শীঘ্র আসে’ এ চেষ্টা অপেক্ষা যত শোভনভাবে নির্বিষভাবে নিরুপদ্রবভাবে আসে, এই চেষ্টা অধিক প্রার্থনীয়। যদি বলো যে শেষোক্ত