পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র


১২৪

    পরপুরুষদের সঙ্গে পরস্ত্রীদের হাত ধরাধরি করিয়া নাচিতে পর্যন্ত কোনো দোষ নাই, কিন্তু আমাদের চক্ষে ওটা কিছু আমোদ-প্রমোদ মেলা-মেশার আতিশয্য বলিয়াই ঠেকে। আমাদের দেশে স্ত্রীস্বাধীনতা ছিল না এমন নহে এবং এখনও তাহা কোথাও কোথাও আছে, কিন্তু তথাপি স্ত্রীলোকেরা আমাদের এমনি সম্মানের পাত্রী যে পর-কেহ তাহাদিগকে স্পর্শ করিবে ইহা আমরা দেখিতে পারি না। সখ্য এবং দাম্পত্য দুয়ের মধ্যে কেবল একটা বালির বাঁধ সংস্থাপন করিয়া যাহারা নিশ্চিন্ত থাকেন তাঁহারাই বলিতে পারেন - এতে দোষ কী, তাতে দোষ কী। কিন্তু যাঁহারা স্ত্রীস্বাধীনতা চান অথচ সখ্য ও দাম্পত্য দুইকে সম্পূর্ণ পৃথক রাখিতে চান, তাঁহারা ঐ স্থানে প্রস্তরের বাঁধ ভিন্ন আর-কিছুতেই সন্তুষ্ট হইতে পারেন না। লেখক যে বলিবেন— সুচক্ষে দেখিলে সকলই সু, কু-চক্ষে দেখিলে সকলই কু, তাহার জো নাই; সহস্র বন্ধুনী হউন-না কেন, তাঁহার বাড়িতে যদি পুরুষ-মানুষ কেহ না থাকে তবে ইংরাজি শাস্ত্রে তাঁহার ঘরে গিয়া তাঁহার সহিত সখ্যালাপ করা অবিধি হুইল কেন? সু-চক্ষে দেখিলে তাহাতে তো কোনো দোষ নাই। ভা.স.

    আত্মার স্বাধীনতা সকল অবস্থাতেই নির্দোষ, কিন্তু স্ত্রীস্বাধীনতা যে অংশে বুঝায় ‘পরপুরুষগণের সহিত একত্রে আমোদ-প্রমোদে মেলা-মেশা’ সে অংশে তাহা নির্দোষ হইতেও পারে না হইতেও পারে; কে বলিতে পারে যে তাহা নির্দোষ ভিন্ন আর-কিছুই হইতে পারে না? সুতরাং আমরা এখনও বলিতেছি যে, পরপুরুষদিগের সহিত আমোদ-প্রমোদে মেলা-মেশা আত্মার স্বাধীনতার ন্যায় দোষাশঙ্কার সীমা-বহির‍্ভূত এমন কোনো বস্তু নহে যে, তাহা স্ত্রীলোকের অবশ্যকর্তব্য কর্মের মধ্যে গণ্য হইবে; উহা অপেক্ষা বরং আপনাদিগকে মিথ্যা অপবাদ নিন্দা-গ্লানি প্রভৃতি হইতে রক্ষা করা স্ত্রীলোকদিগের বেশি কর্তব্য কর্ম। স্ত্রীস্বাধীনতা প্রার্থনীয় নহে— ইহা আমরা কোনো কালে বলিও নাই বলিবও না, কিন্তু যে প্রকার স্ত্রীস্বাধীনতা হুইতে সুফল অপেক্ষা কুফলেরই অধিক সম্ভাবনা সে স্ত্রীস্বাধীনতা থাকা অপেক্ষা না থাকা-ই অধিক প্রার্থনীয়। যে দেশে বুদ্ধিমান লোকের নিকট বিবাহ বিভীষিকা-বিশেষ সে দেশের স্ত্রীস্বাধীনতার অনুকরণ করিবার জন্য