পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পত্র: পাদটীকা


১২৫

    হিন্দুসমাজের কী যে দায় পড়িয়াছে তাহা তো বুঝা যায় না। বোম্বাই দেশে কি স্ত্রীস্বাধীনতা নাই? মহারাষ্ট্রীয় দেশে কি স্ত্রীস্বাধীনতা নাই? সে-সব অগ্রাহ্য করিয়া ভয়ানক উৎপেতে য়ুরোপীয় স্ত্রীস্বাধীনতাকে আদর্শ করিয়া চলিতে আমাদের যে এত ব্যগ্রতা তাহার অর্থ আর কিছুই নয়, খালি— বিধাতার বিড়ম্বনা। তাহার অর্থ, অর্থের অপব্যয়, সময়ের অপব্যয়, শরীরের কষ্ট, মনের কষ্ট আর মেম-সাহেবি একটা তমো— এই ষা-কিছু। ভা. স.

    স্বাভাবিক-অস্বাভাবিকের সহিত এখানকার সম্পর্কই নাই— এখনকার যা-কিছু বিচার তা কেবল সুবিধা অসুবিধা নিয়ে। আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থাতে স্ত্রীলোকদের অন্তঃপুরবাস-প্রথা সর্বাপেক্ষা নিরাপদ বলিয়াই তাহা প্রার্থনীয়। যদি চতুর্দিকে মানহানির ভয় সত্যসত্যই বিদ্যমান না থাকিত তাহা হইলে অন্তঃপুরকে কারাগারের সহিত তুলনা করিলে দোষের হইত না; কিন্তু দেশ-কাল-পাত্র বিবেচনা করিয়া দেখিলে নিশ্চয়ই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে হইবে যে, অন্তঃপুর কুলস্ত্রীদিগের কঠোর কারাগার নহে— তাহা তাহাদের নিরাপদ-দুর্গ, অভয়নিকেতন। আগে যথার্থ ধর্ম-প্রচার-দ্বারা চারি দিকের জঞ্জাল পরিষ্কার করো, তাহার পরে অন্তঃপুরপ্রথা অল্পে অল্পে পরিবর্তন করো— তাহাতে আমাদের কিছুমাত্র অমত নাই। কিন্তু তাও বলি অস্তঃপুরপ্রথা একেবারেই উচ্ছেদ করা কখনোই হইতে পারেও না, পারিবেও না; এমন-কি ইউরোপেও অন্তঃপুরপ্রথা একেবারে যে নাই তাহা বোধ হয় না। ও দেশে যদি পুরুষদিগের মেলা-মেশা করিবার স্বতন্ত্র স্থান ও স্ত্রীলোকদের মেলা-মেশা করিবার স্বতন্ত্র স্থান নির্দিষ্ট না থাকে তবে সে অভাব যত শীঘ্র পূরণ হয় ততই ভালো। boudoir বোধ হয় কতকটা আমাদের অবরোধের কাছাকাছি যায়। যাহা হউক—আমাদের দেশের অন্তঃপুরপ্রথা পরিবর্তন করিবার যদি আবশ্যক হয় তবে আমাদের আপনাদের রকমে তাহা করা উচিত। ‘আপনাদের রকমে’ কাহাকে বলে তাহার একটা দৃষ্টান্ত—আমাদের দেশের অতিথিসেবা যেমন স্ত্রীলোকদিগের দ্বারা যত্নের সহিত অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে তাহাকে আদর্শ করিয়া আমাদের অন্তঃপুরপ্রথা পরিবর্তন করা যাইতে পারে, এমন-কি অন্তঃপুরের