পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র




১২৮

    সম্ভাবনা নাই, কিন্তু সেরূপ করিলে অমুক অমুক ব্যক্তিরা কু মনে করিতে পারে—মিছামিছি একটা কলঙ্ক কুড়াইয়া প্রয়োজন কী? এরূপ যখন হইতেও পারে, হইয়াও থাকে, তখন পরপুরুষদিগের সহিত আমোদ-প্রমোদ করিবার কী এমন মূল্য যে, তাহার জন্য স্ত্রী স্বামীর মনে এক মুহূর্তেও ঐরূপ দুর্ভাবনা উদ্দীপন করিয়া তাহাকে ব্যতিব্যস্ত করিবে! ভা স.

    অত্যুক্তি। অন্তরঙ্গ লোকের নিকট কে ঘোমটা টানিয়া বসিয়া থাকে? ঘোমটা যা দেওয়া থাকে তাই থাকে, টানিয়া বেড়াইবার প্রয়োজনাভাবে শুধু-শুধু কেন তাহা করিবে? অন্তরঙ্গ—প্রাণের কেন, মুখের বন্ধুর সঙ্গেও সকল স্ত্রীলোকেরই তো সহজভাবে কথাবার্তা চলিয়া থাকে। তবে যদি বলো যে ঘোমটা দেওয়াটাই অন্যায়, তবে সে কোনো কাজের কথা নহে। কেননা, তাহা ন্যায়ও নহে অন্যায়ও নহে, তাহা দেশাচার মাত্র। তাহা দেখিতেও ভালো বৈ মন্দ নহে। যদি ঘোমটা না দেওয়া প্রথা থাকিত তাহা হইলে কালিদাসের এই সুন্দর কবিতাটি আমরা দেখিতে পাইতাম না— কেয়মবগুণ্ঠনবতী নাতিপরিস্ফুটশরীরলাবণ্যা! অতিপরিস্ফুট লাবণ্যের তীব্রতাও নহে, অপরিস্ফুট লাবণ্যের মন্দতাও নহে, কিন্তু উভয়ের মাঝামাঝি অনতিপরিস্ফুট লাবণ্যের যে-একটি মাধুর্য তাহা কেবল অবগুণ্ঠন-দ্বারাই রক্ষিত হইতে পারে। ভা. স.

    মুখ দেখিতেও দোষ নাই, কথা কহিতে দোষ নাই, আলাপ করিতেই দোষ— সুতরাং এটাও অত্যুক্তি। ভা. স.

    আমার বন্ধুর সহিত আমি কোনো কারবার রাখিব না, এমন-কি তাহার মুখ দর্শন করিব না— অপরাধ? না, তিনি তাঁহার স্ত্রীর সঙ্গে আমার আলাপ করাইয়া দেন নাই। একটা ব্র্যাঘ্রের মুখ হইতে আমিষ কাড়িয়া লইলে তাহারই বটে ঐরূপ ক্রোধানল প্রজ্বলিত হইয়া উঠে। কিন্তু লেখকের অতবড়ো রাগের তেমন তো কোনো গুরুতর কারণ দেখা যায় না। ইংরাজেরা দেখো কেমন ধীরপ্রকৃতির লোক, তাঁহাদের স্ত্রীরা পরপুরুষদিগের সহিত নাচিলেও তাঁহাদের ধৈর্য লোপ হয় না। ভা. স.