পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

fashionটা খুব কম দূর ব্যাপ্ত হয়েছে। সীমন্তিনীরা হাতের যতটুকু বেরিয়ে থাকে, মুখটি ও গলাটি, দিনের মধ্যে অনেকবার অতি যত্নে ধুয়ে থাকেন। বাকি অঙ্গ পরিষ্কার করবার তাঁরা তত আবশ্যক দেখেন না, কেননা মনোহরণের প্রধান সিঁধ মুখটিতে কোনো প্রকার মরচে না পড়লেই হল। মাসে দুবার একটা sponge-bath নিলেই তাঁরা যথেষ্ট মনে করেন; sponge bathএর অর্থ হচ্ছে একটা ভিজে স্পঞ্জ্ দিয়ে গা সাফ করে ফেলা, অর্থাৎ একটা ভিজে গামছা দিয়ে গা মোছা আর কী। আমি একটা ইংরেজ পরিবারের মধ্যে বাস করতে গিয়েছিলেম, তাঁরা আমি স্নান করি শুনে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের কোনো প্রকার স্নানের সরঞ্জাম ছিল না। সমস্ত আমার জন্যে ধার করে আনতে হয়েছিল, এমন বিপদ! যা হোক, আমাদের বিলাসিনী স্নান করলেন কি না বলতে পারি নে, তার পরে তাঁর সাজ সজ্জার বিষয়ে আমি নিতান্তই অনভিজ্ঞ। কাপড়ের এখানে একটু ফিতে, ওখানে একটু পাড়, কোথাও একটু এলোমেলো করে দেওয়া, কোথাও একটু পিন দিয়ে আটকে রাখা। কত প্রকার টুকরো-টুকরো জিনিসপত্র এঁটেসেঁটে, মুখে কত প্রকার রঙচঙ লেপে, মনোদুর্গ আক্রমণের জন্য যথাযোগ্য যুদ্ধসজ্জা সমাপ্ত হয়। তার পরে এই রকম বাহারে সাজ-সজ্জায় এক বান্‌ডিল রূপের মতো drawing-roomএর (অভ্যর্থনাশালার) কৌচে গিয়ে বসলেন; বাড়িতে লোক দেখা করতে এলে তাদের সঙ্গে আলাপচারি করা হচ্ছে তাঁর কাজ। অনেক লোক একসঙ্গে এলে তাঁর কর্তব্য হচ্ছে— তাঁর বাক্য ও হাসির অমৃত সকলকে সমানভাবে বিতরণ করা, বিশেষ কারও সঙ্গে বেশি কথা কওয়া বা বিশেষ কাউকে বেশি যত্ন করা কোনোমতে উচিত নয়। এ কাজটা অত্যন্ত দুরূহ, বোধ হয় অনেক অভ্যেসে দুরস্ত;

১৩০