পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

fashionable মেয়ে ছাড়া বিলেতে আরও অনেক রকম মেয়ে আছে, নইলে বিলেতে সংসার চলত না। মধ্যবিৎ গৃহস্থদের মেয়ের কতকটা মেহেন্নত করতে হয়, অতটা বাবুয়ানা করলে চলে না। সকালে উঠে একবার kitchen তদারক করতে যেতে হয়—kitchen পরিষ্কার আছে কি না, জিনিসপত্র যথাপরিমিত আনা হয়েছে কি না, যথাস্থানে রাখা হয়েছে কি না, ইত্যাদি দেখাশুনা করেন; রান্না ও খাবার জন্য জিনিস আনতে হুকুম দিতে হয়, পয়সা বাঁচাবার জন্য নানা প্রকার গিন্নিপনার চাতুরী খেলাতে হয়— কালকের মাংসের হাড়গোড় কিছু যদি অবশিষ্ট থাকে তা হলে বন্দোবস্ত করে তার থেকে আজকের সূপ চালিয়ে নেন, পরশু দিনকার বাসি রাঁধা মাংস যদি খাওয়াদাওয়ার পর খানিকটা বাকি থাকে তা হলে সেটাকে রূপান্তরিত করে আজকের টেবিলে আনবার সুবিধে করে দেন, এই রকম নানা প্রকার বন্দোবস্ত করতে হয়। তার পরে ছেলেদের জন্য মোজা কাপড়-চোপড় নিজের হাতে তৈরি করেন, এমন-কি নিজেরও অনেক কাপড় নিজে তৈরি করেন। এঁদের সকলের ভাগ্যে নভেল পড়া ঘটে ওঠে না; বড়ো জোর খবরের কাগজ পড়েন, তাও সকলে পড়েন না দেখেছি। অনেকের পড়াশুনার মধ্যে কেবল চিঠি পড়া ও চিঠি লেখা, দোকানদারদের বিল পড়া ও হিসাব লেখা। খানিকটা লেখাপড়ার চর্চা না থাকলে লেখাপড়ায় রুচি জন্মায় না। তাঁরা বলেন, ‘politics এবং অন্যান্য গ্রামভারি বিষয় নিয়ে পুরুষরা নাড়াচাড়া করুন; আমাদের কর্তব্য কাজ স্বতন্ত্র।’ তাই জন্যে তাঁরা লেখাপড়া চর্চা করেন না। যেন পরের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে নিতান্ত সংকুচিত বলেই তাঁরা লেখাপড়া করেন না, যেন নিতান্ত অনধিকার প্রবেশ হয় বলেই তিনি প্রায় তাঁর স্বামীর Libraryতে পদার্পণ করেন না। কিন্তু আমি এর মধ্যে কর্তব্য

১৩৪