পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পত্র

সভায় একটা কোনো উচ্চ বিষয় নিয়ে চর্চা হলে তাঁরা শোনেন ও নিজের বক্তব্য বলতে পারেন— এই রকম করে অনেক জানতে পারেন ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা একটা বিষয়ের কত দিক দেখেন ও কিরকম চক্ষে দেখেন তা বেশ বুঝতে পারেন। সুতরাং একটা কথা উঠলে তিনি ভালো করে কইতে পারেন, কতকগুলো ছেলেমানুষি আকাশ-থেকে-পড়া প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন না ও বুঝতে না পেরে তাঁকে হাঁ করে থাকতে হয় না। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খুব সহজ ভাবে গল্পসল্প করতে পারেন, নিমন্ত্রণসভায় মুখ ভার করে বা লজ্জায় অবসন্ন হয়ে থাকেন না, পরিচিতদের সঙ্গে অন্যায় ঘেঁষাঘেঁষি নেই কিম্বা তাদের কাছ থেকে নিতান্ত অসামাজিক দূরেও থাকেন না। লোকসমাজে মুখটি খুব হাসিখুশি প্রসন্ন; যদিও নিজে খুব রসিকা নন কিন্তু হাসি তামাসা বেশ উপভোগ করতে পারেন, একটাকিছু ভালো লাগলে মন খুলে প্রশংসা করেন, একটা কিছু মজার কথা শুনলে প্রাণ খুলে হাস্য করেন। ঠোঁট বন্ধ করে থাকা ও লজ্জায় ম্রিয়মাণ হয়ে পড়া এখানকার মেয়েদের আচরণের আদর্শ নয়। মনে করে দেখো দেখি একটা নিমন্ত্রণসভায় ৩০টি মেয়ে ঘাড় হেঁট করে চুপচাপ বসে আছেন, সে সভায় পুরুষদের কী দুরবস্থা! ক্রমে ক্রমে তাঁদেরও মুখ বন্ধ হয়ে আসে, মনের ভিতর এক রকম অসোয়াস্তি উপস্থিত হয় ও ঘোমটা থাকলে ঘোমটা দিতে ইচ্ছে করে। লজ্জায় চুপচাপ করে থাকা অত্যন্ত অসামাজিক গুণ। তুমি তো কতকগুলো বাঘের মধ্যে গড় নি— আপনার জাত, মানুষ, বিশেষতঃ ভদ্রলোক— কোনো অভদ্র কুচরিত্র দলের মধ্যে গিয়ে পড় নি—তবে বেশ মিলে মিশে গল্পসল্প করবে না তো কী? লজ্জা দু দণ্ড দেখতে বেশ মন্দ লাগে না, হয়তো তার মধ্যে বেশ কবিত্ব-মাখা মাধুর্য দেখতে পাওয়া যায়— কিন্তু দিন রাত লজ্জার সঙ্গে কারবার করা

১৩৭