পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

অত্যন্ত যন্ত্রণা। দু-তিন ঘণ্টা পরিশ্রম করে একটা কথার উত্তর পেলেম, একবার সওয়া গেল—কিন্তু দিন রাত যদি ঐ রকম একটা কথা শোনবার জন্যে গলদ‍্ঘর্ম হতে হয় তা হলে তো বাঁচা যায় না। তুমি যদি আমার সঙ্গে মন খুলে আমোদ-প্রমোদ না কর তা হলে দায়ে পড়ে তোমার সংসর্গ ছেড়ে আমাকে অন্য সংসর্গ খুঁজতে হয়। বিয়ের মন্ত্র কিছু ভালোবাসা জন্মাবার মন্ত্র নয়, বিয়ে হলেই ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসাও নেই, অথচ আমার স্ত্রী যদি আমাকে কথায় বার্তায় আমোদে না রাখতে পারেন, তা হলে আমি আমার সেই মূক সঙ্গিনী ছেড়ে কি অন্যত্র আমোদের সন্ধান করব না? আমার তাই বোধ হয় মেয়েদের একটা অস্বাভাবিক লজ্জা ও সংকোচ চলে যাওয়া ভালো; যৌবনের একটা স্বাভাবিক উচ্ছ্বাস, হৃদয়ের ও মনোবৃত্তির স্বাভাবিক বিস্তার শিক্ষা ও অভ্যেসের চাপে না পিষে ফেলা ভালো।

 আমি দিন-কতক আমার শিক্ষকের পরিবারের মধ্যে বাস করেছিলুম। সে বড়ো অদ্ভুত পরিবার। Mr. B মধ্যবিত্ত লোক। তিনি লাটিন ও গ্রীক খুব ভালো রকম জানেন। তাঁর ছেলেপিলে কেউ নেই— তিনি, তাঁর স্ত্রী, আমি আর একটা দাসী, এই চার জন মাত্র একটি বাড়িতে থাকতুম। Mr. —আধবুড়ো লোক, অত্যন্ত অন্ধকার মূর্তি, দিন রাত খুঁৎখুঁৎ খিট্‌থিট্ করেন, নীচের তলায় রান্নাঘরের পাশে একটি ছোট্টো-জানলা-ওয়ালা দরজাবদ্ধ অন্ধকার ঘরে থাকেন, একে তো সূর্যকিরণ সে ঘরে সহজেই প্রবেশ করতে পারে না তাতে জানলার ওপর একটা পর্দা ফেলা, চার দিকে পুরোনো ছেঁড়া ধুলো-মাখা নানা প্রকার আকারের ভীষণদর্শন গ্রীক লাটিন বইয়ে দেয়াল ঢাকা—ঘরে প্রবেশ করলে এক রকম বদ্ধ হাওয়ায় হাঁপিয়ে উঠতে হয়। এই ঘরটা হচ্ছে তাঁর

১৩৮