পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পত্র

করে নিতে যতটা বুদ্ধির আবশ্যক ততটা আপাততঃ আমার তহবিলে আছে কি না সে বিষয়ে আমার নিজের ও আমার আলাপী বন্ধুবর্গের ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। অতএব আমার এই আধ-সিদ্ধ অভিজ্ঞতার ব্যঞ্জনগুলো তোমাদের পাতে দিচ্ছি, যদি রুচিজনক হয় ও তোমাদের পাকযন্ত্রের হানি-জনক বিবেচনা না করে। তা হলে সেবা কোরো। এইখানে আমার উদ্যোগপর্ব ও বিনয়পর্ব শেষ করে প্রবন্ধের যথাশাস্ত্র মুখবন্ধ করে প্রকৃত প্রস্তাব আরম্ভ করি।

 আমরা লণ্ডনে দুই-এক ঘণ্টা থেকেই ব্রাইটনে প্রস্থান করি। ব্রাইটন সমুদ্রের ধারে— একটা বড়ো শৌখিন (fashionable) শহর। দেখতে শুনতে আকারে ইঙ্গিতে লন‍্ডনেরই মতো, কেবল লন‍্ডনের মতো সে রকম অন্ধকার মেঘাচ্ছন্ন ভ্রূকুটিকুটিলমুখ নয়। আমাদের একটি বাঙালি পরিবার ব্রাইটনে বাস করেন, তাঁদের সেখেনে গিয়ে আশ্রয় নিলুম। দেখি যে আমাদের গৃহিণী তাঁর দিশি বস্ত্র প’রে ছেলেপিলে নিয়ে ঘরে অন্নপূর্ণার মতো বিরাজ করছেন।

 তাঁর দিশি কাপড় দেখে তাঁর বিলিতি বন্ধুরা অত্যন্ত প্রশংসা করেন ও তাঁর দিশি বন্ধুরা সেই পরিমাণে খুঁৎখুঁৎ করেন। তাঁর দিশি কাপড় দেখে তাঁর বিলিতি বন্ধু Miss - বলেন ‘ঐ রকম ভাঁজভাঁজ কাপড়ে যে-একটি সুন্দুর শ্রী আছে, তা আঁট-সাঁট ছাঁটা-ছোঁটা গাউনে পাওয়া যায় না’; তাঁর দিশি বন্ধু Miss -(একজন বিলিতি বাঙালি) বলেন যে, ‘যে কাপড়টা পরা হচ্ছে সেটা একে তো সম্পূর্ণ দিশি নয় (অর্থাৎ ফিন্‌ফিনে শান্তিপুরে শাড়ি নয়) তার উপরে তাতে যদি এক রত্তি শ্রী থাকত তা হলেও নাহয় ভদ্রসমাজে পরা যেত, কিন্তু তাও নেই।’ এই রকম বিলিতি ও দিশি বন্ধুদের মধ্যে মতের আকাশ পাতাল তফাত দেখা যাচ্ছে। আমি তো আগে

১৪৩