পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

বলেছি যে, বাঙালি সাহেব হয়ে উঠলে তিনি সাহেবের ঠাকুরদাদা হয়ে ওঠেন; আপনার লোক পর হয়ে গেলে সে যেমন পর হয়ে যায় এমন আর কেউ হয় না। যা হোক, আমাদের দেবীর যে এখনো অনেকগুলি ‘কুসংস্কার’ আছে দেখে আমরা তৃপ্তি লাভ করলেম। এমন-কি তিনি বললেন যে, বিলেতে এসে তাঁর ‘কুসংস্কার’গুলি আরও বদ্ধমূল হচ্ছে। কী সর্বনাশ! দেশের উপর ভালোবাসা আরও বেড়েছে। কী আশ্চর্য! তিনি বললেন তাঁর মনের এতদূর পর্যন্ত উন্নতি হয় নি যে, সার্বভৌমিক ভাব তাঁর মনে বদ্ধমূল হতে পারে, বরঞ্চ সে বিষয়ে তাঁর মন আরও সংকীর্ণ হয়ে এসেছে। তোমরাই বলো, বিলেতে এসেও এঁর যদি এই দুর্দশা তা হলে এঁর কি আর শোধরাবার উপায় আছে? ছেলেপিলেরা দেখলুম অত্যন্ত খুশিতে আছে, তাদের স্ফর্তি ও উদ্যম দেখে কে! সমস্ত দিনের মধ্যে লাফালাফি হুটোপাটির তিলেক বিশ্রাম নেই। এইমাত্র সু—এসে আমার লেখার সম্বন্ধে কত শত প্রকার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিল। জিজ্ঞাসা করছিল কী করে আমি এত বড়ো চিঠি বাড়িতে লিখি, সে এর অর্ধেকও লিখতে পারে না। দ্বিতীয় প্রশ্ন হল এত বড়ো চিঠি লেখবার আবশ্যক কী, ছোটো করে লিখলে তো সেই একই কথা। তৃতীয় প্রশ্ন হল, ‘অত কষ্ট করে হাতে করে না লিখে যদি ছাপিয়ে পাঠিয়ে দেও তা হলে কী হানি’ছাপিয়ে পাঠালে তার মতে কত প্রকার সুবিধে তাই একে একে বলতে লাগল। তার পরে আমার চিঠি পড়তে চেষ্টা করতে লাগল। তার পরে তার শেষ উপসংহার হচ্ছে যে আমার লেখা অত্যন্ত খিজিবিজি, বাঁকাচোরা, অপরিষ্কার (সে নিজে বুঝতে পারলে না ব’লে বোধ হয়) —মুক্ত কণ্ঠে এই মতটি ব্যক্ত করে টেবিলের চারি দিকে ঘুরে ঘুরে বেড়াতে আরম্ভ করলে। ইতিমধ্যে কখন বি—

১৪৪