পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

করা হয়—এ এক রকম অস্বাভাবিক মনোবৃত্তি, এক রকম অস্বাভাবিক ভয়। বড়োদের আমরা স্বভাবতই ভক্তি করি, তাঁদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেখে আমরা স্বভাবতই তাঁদের উপর নির্ভর করি, কিন্তু আমাদের পরিবারের মধ্যে যে ভক্তি যে নির্ভরের ভাব বদ্ধমূল সে কি স্বাভাবিক? প্রতি পদে শিক্ষা শাসন ও অভ্যাসের প্রভাবেই কি তার জন্ম হয় না? ছেলেবেলা থেকে প্রতি পদে আমাদের কানে মন্ত্র দিতে হয় যে, পিতা দেবতুল্য, গুরু দেবতুল্য। কেন, দেবতুল্য কেন? দেবভাবের কঠোর ও সুদূর সম্ভ্রম কেন তাঁদের উপর অর্পণ করা হয়? তাঁরা আমাদের ভালোবাসার পিতা, ভালোবাসার মাতা, ভালোবাসার সঙ্গে আমরা তাঁদের মুক্ত আলিঙ্গনে গিয়ে বদ্ধ হব[১] না যোড়হস্তে বিনীত ভাবে, আমাদের মানুষ পিতার কাছে না গিয়ে, আমাদের জাতের বহির‍্ভুক্ত কোনো দেবতুল্য ব্যক্তির কাছে গিয়ে অতি সন্তর্পণে বসে থাকব—অতি মৃতম্বরে কথা কব— অতি নত ভাবে আত্মনিবেদন করব? এর মধ্যে কোন্‌টা স্বাভাবিক?[২] আমাদের পরিবারে গুরুলোকদের ’পরে এই রকম একটা অস্বাভাবিক ভক্তির উদ্রেক করে দেওয়া হয়, গুরুলোকেরাও সেই অন্ধ ভক্তির প্রভাবে বলীয়ান হয়ে ছোটোদের উপর যথেচ্ছব্যবহার করেন। তাঁরা চান, তাঁদের সমস্ত মত সমস্ত আজ্ঞা ছোটোরা অবিচারে শিরোধার্য করে নেয়, সে বিষয়ে তারা তিলমাত্র দ্বিরুক্তি বা দ্বিধা না করে; যেন ছোটোরা কতকগুলি কলের কাঠের পুতুল, তাদের মন নেই, তাদের মনোবৃত্তি নেই, তাদের ইচ্ছে নেই, তাদের বিচারশক্তি নেই! সংসারে তোমার যত প্রকার বড়ো আছে (কেবল লম্বায় ছাড়া) তাদের কাছে তোমার বিবেচনা ও ইচ্ছে কিছুমাত্র খাটিয়ো না, সেগুলি আপাততঃ সঞ্চিত করে রেখে দেও, অবসর পেলে তোমার ছোটোদের কাছে

১৪৬
  1.  
  2.