পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পত্র

করাই হচ্ছে পুণ্য।[১] ছোটোদের পক্ষে গুরুদের আজ্ঞা পালন করা বাস্তবিকই ভালো, আমি ছোটোদের গুরুদের বিপক্ষে বিদ্রোহ করতে বলছি নে, কিন্তু গুরুদের প্রতি আমার বিনীত নিবেদন যে তাঁরা যেন ছোটোদের আজ্ঞা না করেন; হয় অনুরোধ করেন নয় কারণ প্রদর্শন করেন, যখন কারণ প্রদর্শন করেও ফল হল না তখন একটুখানি গুরুত্ব প্রয়োগ করতে পারেন। কেননা, অপরিমিত ভক্তির রাজ্যে যুক্তির অত্যন্ত হীন পদ; তিনি ক্রমে এত মুষড়ে যেতে থাকেন যে অবশেষে তাঁর আর মাথা তোলবার শক্তি থাকে না। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের আবার একটাআধটা গুরুলোক নয়, পদে পদে গুরুলোক। এই রকম ছেলেবেলা থেকে গুরুভারে অবসন্ন হয়ে একটি মুমূর্ষু, জাতি তৈরি হচ্ছে। ছেলেবেলা থেকে বলের অন্ধ দাসত্ব করে আসছে, সুতরাং বড়ো হলে সে অবস্থা তার নতুন বা অরুচিজনক বলে ঠেকে না, তার কাছে এ অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আজ্ঞা[২] পালন করে করে তার এমন অবস্থা হয়ে যায় যে, আজ্ঞা করে বললেই তবে সে একটা কথা গ্রাহ্য করে, বুঝিয়ে বলতে গেলেই বেঁকে দাঁড়ায়। এখনকার বিখ্যাত বাংলা-লেখকদের লেখায় কেমন একটা আজ্ঞার ভাব দেখতে পাওয়া যায়— কথাগুলি অসন্দিগ্ধ, স্পষ্ট, জোর-দেওয়া; পাঠকদের সঙ্গে সমান আসনে বসে যে বিচার করছেন তা মনে হয় না কিম্বা কথা কয়ে কয়ে যে চিন্তা করছেন তাও মনে হয় না, তাঁরা কতকটা গুরুমহাশয়ের মতো কথা কন; মনে হয় হাতে একটা বেত আছে, চোখে একটা চশমা আছে, মুখে একটা কঠোর স্বাতন্ত্র্যের ভাব বর্তমান—ইংরাজিতে যাকে dogmatic বলে তাঁদের লেখার আপাদমস্তক সেই রকম। তাতে তাঁদের দোষ নেই, নইলে পাঠকেরা তাঁদের কথা মানে না; পাঠকেরা যেই

১৪৯
  1.  
  2.