পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

দেখেছেন তুমি একটু ইতস্ততঃ করছ কিম্বা একটা কথা খুব জোর দিয়ে বলছ না, কিম্বা তােমার উচ্চ আসন থেকে এতদুর পর্যন্ত নেবে এসেছ যে তাঁদের সঙ্গে সমান ভাবে বিচার করতে প্রবৃত্ত হয়েছ, তা হলেই তােমার কথা একেবারে অগ্রাহ্য হয়ে দাঁড়ায়। তুমি যুক্তি না দেখিয়ে একটা কথা জোর করে বলো (অবিশ্যি তােমার একটু নাম থাকা দরকার) তাঁরা মনে করেন ‘এটা বুঝি একটা ধরা-কথা, কেবল অজ্ঞতাবশতঃ আমরা জানি নে’; তাঁরা অপ্রস্তুত হয়ে সমস্বরে সবাই মিলে বলে ওঠেন, ‘হাঁ এ কথা সত্য, এ কথা সত্য।’ যুক্তি দেখাতে গেলেই তাঁরা মনে করেন তবে বুঝি এটাতে কোনাে প্রকার সন্দেহ আছে, এটা একটা স্থির সিদ্ধান্ত নয়; অমনি তাঁরা চোখ-টেপাটেপি করতে থাকেন; অত্যন্ত অবিশ্বাসের ভাব দেখান; মনে করেন এ বিষয়ে অনেক কথা ওঠানাে যেতে পারে, অর্থাৎ আমি যদি বা না পারি আমার চেয়ে আর কোনাে বুদ্ধিমান জীব হয়তাে পারেন, যুক্তিটা নেই যে আমি বলে যাব ‘হাঁ সত্যি’— আবার দুদণ্ড বাদে যদি ওর একটা ভুল বেরিয়ে পড়ে তা হলে কি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ব? পাঠকেরা যে লেখকের কথা পালন করতে চান সে লেখকের পাঠকদের চেয়ে একটা স্বতন্ত্র প্রাণী হওয়া আবশ্যক; পাঠকদের কাছে এমন বিশ্বাস জমিয়ে দিতে হবে যে তিনি সব জানেন, তাঁর উপরে আর কারও কিছু বলবার কথা নেই। বলবার কথা থাকলেই তিনি একেবারে মাটি হয়ে গেলেন। তার মূল কারণ, ছেলেবেলা থেকে আমরা শাসনের বশ, যুক্তির রামরাজ্যে আমরা বাস করি নি। তুমি ঘর থেকে গ’ড়ে-পিটে তৈরি করে আমাদের একটা অসন্দিগ্ধ আজ্ঞা দেও আমরা পালন করব, কিন্তু তােমার ঝুড়ি থেকে তােমার যুক্তির মালমশলাগুলি বের করে আমাদের সুমুখে

১৫০